যুব তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী মঞ্চেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘সমাজবন্ধু’দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেল।
মঙ্গলবার দুপুরে কোচবিহারের হলদিবাড়ি ব্লক সদরে প্রকাশ্যে হাতাহাতি, চেয়ার-টেবিল ছোড়াছুড়ি, গাড়ি ভাঙার দৃশ্য দেখে সংবর্ধনা প্রাপকেরা মঞ্চ থেকে ছুটে পালান। মঞ্চের আলো, পাখা, মাইক ভেঙে দেওয়া হয়। দর্শকাসনের আশেপাশে থাকা নেতাদের গাড়ি, চেয়ার-টেবিল ভাঙা শুরু হলে দর্শকেরাও ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তৃণমূল নেতৃত্ব এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি শান্ত হলেও, কিছু ক্ষণের মধ্যেই হলদিবাড়ি শহরে তৃণমূলের সদর কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়।
ঘটনায় ‘বিরক্ত’ তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়। আমি বিশদে খোঁজখবর নিচ্ছি।”
সন্ধ্যার পরেই হলদিবাড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ টহলদারিতে নামে। তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙার ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। রাত পর্যন্ত অবশ্য অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙা নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। এসডিপিও (হলদিবাড়ি) সীতারাম সিংহ বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” |
তৃণমূল সূত্রের খবর, হলদিবাড়িতে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে দলের অন্দরে ‘গোলমাল’ চলছে। সম্প্রতি তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানের ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত দেবব্রত দে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হন। তা নিয়ে আপত্তি তোলেন দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ যুব তৃণমূল নেতা সৌমেন ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরা।
ব্লক সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে দেবব্রতবাবু ও সৌমেনবাবুর অনুগামীদের মধ্যে লাগাতার বিবৃতির লড়াই চলছিল।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন দেবব্রতবাবুর উদ্যোগে রিকশাচালক, ধোপা, চর্মকার-সহ সমাজের বিভিন্ন পেশার ‘সমাজবন্ধু’দের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়। রেলগেটের পাশে শহর তৃণমূল সদর কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করে বিকেল ৪টেয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। মঞ্চে হাজির হন ৮৮ বছরের বৃদ্ধ রিকশাচালক রঞ্জন মুনিয়া, ভ্যান রিকশাচালক ষাটোর্ধ্ব সরবালা বর্মন, পান-সুপারি বিক্রেতা জয়চন্দ্র কর্মকার, চর্মকার শঙ্কর রুহিদাসরা। সংবর্ধনা শুরু করার মুহূর্তেই আচমকা সৌমেনবাবুর অনুগামীরা সেখানে গিয়ে ‘কে ব্লক সভাপতি, কে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছেন’ এমন নানা প্রশ্ন তুলে চিৎকার করে মঞ্চে উঠে যান বলে অভিযোগ। মুহূর্তে মারপিট বাধে।
দেবব্রতবাবুর দাবি, “জেলা সভাপতিকে জানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। সৌমেনবাবুরা এমন কাণ্ড ঘটিয়ে দলের ভাবমূর্তি খারাপ করলেন।” সৌমেনবাবু দাবি করেছেন, “আমাদের অন্ধকারে রেখে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে কেন তা জানতে গেলে, দেবব্রতবাবুরা নিজেরাই ভাঙচুর করে গোলমাল পাকান।”
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই ধরনের পূর্ব নির্ধারিত কোনও দলীয় কর্মসূচি হলদিবাড়িতে ছিল না। কোন পরিস্থিতিতে, কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের জানাব। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পক্ষান্তরে অর্ঘ্য রায়প্রধান বলেন, “সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিল। কারা গোলমাল করেছেন, সবাই দেখেছেন। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।”
যাঁরা সংবর্ধনা নিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের কয়েকজন লণ্ডভণ্ড অনুষ্ঠান-মঞ্চের অদূরে দাঁড়িয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, “আমরা তো সংবর্ধনা চাইনি। এ ভাবে ডেকে নিয়ে এসে নিজেরা হাতাহাতি করে আমাদের বিপদের মুখে ফেললেন কেন? আগে জানলে আসতামই না!” |