সাপ্তাহিক হাটের জমি দখল করে ‘মোটা টাকা নিয়ে’ দোকান বসানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মালদহের বামনগোলা থানার পাকুয়াহাট। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। কেন শতাধিক বছরের পুরনো হাটের জমি দখল হবে, সেই প্রশ্নে ক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে সমস্ত দোকানের সদ্য নির্মিত কাঠামো ভেঙে দেয়। ক্ষুব্ধ জনতার অনেকেই ‘ইনটাক ও তৃণমূলের নেতাদের একাংশের মদতে ওই হাট দখলের চেষ্টা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তেজিত জনতা লাঠি, শাবল, বাঁশ নিয়ে হাটের মধ্যে থাকা আইএনটিইউসির একটি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। অদূরে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অফিসও ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। ওই গোলমালে স্থানীয় হাট ব্যবসায়ীদের একাংশও জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। পুলিশ ও দমকল গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। তবে গোলমালের জেরে হাট ভণ্ডুল হয়ে যায়। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
এই ঘটনার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের ওই ব্লকের যুগ্ম সম্পাদক মহেশ বর্মন বামনগোলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “ওই হাট থেকে টাকা আদায় করেন, এমন কয়েকজন বাসিন্দার নেতৃত্বে পাকুয়াহাটে আমাদের পার্টি অফিস ভেঙে আগুন ধরানো হয়। পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ পাশাপাশি, আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি কাজি নজরুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাঁদের অফিস ভাঙা হয়েছে। |
পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি সংগঠনের কার্যালয় ভাঙা ও পোড়ানোর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “একটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। অন্যটির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ মেলেনি। তদন্ত শুরু করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জমি দখল নিয়ে কারও অভিযোগ থাকতেই পারে। তা বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বরদাস্ত করার প্রশ্নই নেই। পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ওই হাটে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ধমানের এক পরিবারের মালিকানাধীন প্রায় ১৪০ বিঘা জমির উপরে প্রায় ১০০ বছর আগে ওই হাটের সূচনা হয়। প্রতি মঙ্গলবার হাটের দিন এখন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। পাকুয়াহাট ও লাগোয়া অন্তত ২৫টি গ্রামের অর্থনীতি ওই হাটের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু, নানা ভাবে হাটের জমি দখল হয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বর্তমানে ৪০ বিঘা জমির উপরে হাট বসছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, হাটের আয়তন সঙ্কুচিত হওয়ার ফলে অনেক হাট-ব্যবসায়ী বসার জায়গা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি হাটে বসার জন্য টাকা আদায় হচ্ছে বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। বামনগোলা ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক আফতাব আলম বলেন, “পাকুয়াহাটের জমি দখলের অভিযোগ অনেকদিন ধরেই রয়েছে। একাধিক বৈঠক হলেও তা মেটানো যায়নি।”
বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ওই হাটে আগে আইএনটিইউসির একাধিপত্য ছিল। সম্প্রতি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের বামনগোলার এক নেতার মদতে হাটের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী দোকান তৈরির জন্য খুঁটি পোঁতা হয় বলে অভিযোগ। হাট লাগোয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, অতীতে ইনটাক যে ভাবে কর্তৃত্ব করেছে সে পথেই হাঁটছে তৃণমূলও। এই নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধে।
এ দিন সকালে হাটে ব্যবসায়ীরা বসা শুরুর পরে এলাকার বাসিন্দারা ধীরে ধীরে জড়ো হন। কেন হাটের জমিতে নিত্যনতুন দোকানের কাঠামো তৈরি হচ্ছে, কেনই বা রাজনৈতিক দলের নেতারা তার প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন না, সেই প্রশ্নে আচমকা বিক্ষোভ শুরু হয়। জনতা হাটের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন-পুরনো অস্থায়ী সব কাঠামো ভেঙে দেয়। এর পরেই ইনটাক ও তৃণমূলের অফিসে চড়াও হয় জনতা। আগুন ধরানোর পরে দমকলের গাড়ি গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ যাওয়ার পরে ক্ষুব্ধ জনতা পিছু হটে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “আমাদের বামনগোলা ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পাকুয়াহাটের উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। সে জন্য সিপিএমের মদতে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।” ইনটাকের তরফেও ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। তবে হবিবপুরের সিপিএমের বিধায়ক তথা মালদহ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য খগেন মুর্মু বলেন, “আমাদের দলের কেউ কারও পার্টি অফিস ভাঙচুর করে আগুন লাগায়নি। নিজেদের দোষ ঢাকতে তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের ঘাড়ে দোষে চাপাতে চাইছে।” |