দালাল দৌরাত্ম্য রুখতে সিদ্ধান্ত |
‘রেফার’ হওয়া রোগীর উপরে নজর কালনায় |
হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা রোগীরা অন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন, না কি দালালদের খপ্পরে পড়ে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হচ্ছেন, সে ব্যাপারে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিল কালনা মহকুমা হাসপাতাল।
কালনা মহকুমা হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বহু বছর ধরেই হাসপাতালের বাইরে-ভিতরে দালালদের রমরমা। অভিযোগ, রোগীর পরিজনদের ভুল বুঝিয়ে এই সব দালালেরা শহরের নানা নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। এমনকী, দালালদের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে ওষুধও কেনেন অনেকে। হাসপাতালে এক শ্রেণির চিকিৎসকও পরোক্ষে এই সব দালালদের মদত দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। হাসপাতাল চত্বরেই ঘোরাঘুরি করে অনেক দালাল। যত বেশি সম্ভব রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজনকে প্রভাবিত করে নার্সিংহোম বা বেসরকারি পরীক্ষাগারে নিয়ে যাওয়াই থাকে তাদের উদ্দেশ্য। এর বিনিময়ে মোটা টাকা কমিশন উপার্জন করে থাকে তারা।
সম্প্রতি কালনা মহকুমা হাসপাতাল থেকে এক প্রসূতিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কালনারই একটি নার্সিংহোমে তার প্রসব হয়। ওই রোগীর আত্মীয়েরা কালনার উপ-পুরপ্রধানকে লিখিত অভিযোগে জানান, হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পরেই ওই প্রসূতিকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন এক ব্যক্তি। |
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার অনেক আগে থেকেই অভিযোগ আসছিল, দালালেরা রোগীর আত্মীয়দের প্রভাবিত করছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা রোগীদের তারা ভুল বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে নানা নার্সিংহোমে। এই কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগে দু’জন চিকিৎসককেও চিহ্নিত করা হয়। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে তাঁদের কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
মাস দেড়েক আগে মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির একটি বৈঠক হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেই বৈঠকেই স্থানান্তর করা রোগীদের উপরে নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, প্রতিটি ওয়ার্ডের রেজিস্টারে রোগীর নাম, রোগের বিবরণ, ঠিকানা ও আত্মীয়দের ফোন নম্বর লিপিবদ্ধ রাখা হবে। অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করা রোগীদের ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে ফোন করে জানতে চাওয়া হবে, কোথা থেকে চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁরা। বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করালে তার কারণ সবিস্তার জানতে চাওয়া হবে বলে রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে জানানো হয়।
সম্প্রতি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির আরও একটি বৈঠক হয়। সেখানে প্রতি ওয়ার্ডে রোগীদের ব্যাপারে তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। পাশাপাশি, ওই বৈঠকে ঠিক হয়, যে সব রোগীরা হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নজরদারি চালানো হবে। যে সব রোগীদের নানা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়, তাঁরা পরে কোথায় চিকিৎসা করাচ্ছেন, তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এ জন্যও রেজিস্টারে রোগীদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখে রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। রোগী কল্যাণ সমিতির দাবি, প্রতি দু’মাস বা তিন মাস অন্তর রেজিস্টার ধরে রোগীদের ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “এই ব্যবস্থা ঠিক মতো চালানো গেলে দালালেরা রোগীর আত্মীয়দের প্রভাবিত করার সাহস পাবে না।” হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল বলেন, “কঠোর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হাসপাতালের কেউ রোগীদের প্রভাবিত করার কাজে জড়িত থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠানো হবে।” |