শহরে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে অভিযান বন্ধ থাকার দায় কার তা নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল সমর্থন করার পরও অবৈধ নির্মাণ কেন ভাঙা হচ্ছে না মঙ্গলবার মেয়রের দফতরে দেখা করে লিখিত জবাব চেয়েছেন তৃণমূলের মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান-সহ ১৪ জন কাউন্সিলর। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পার্কিং-এর বরাত যাঁরা পেয়েছিলেন, সময়সীমা পার হওয়ার পরেও সে সব ক্ষেত্রে নতুন করে টেন্ডার না ডেকে কেন পুরসভা লোকসান গুনছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বস্তুত, ওই সমস্ত বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি কেন ব্যহত হচ্ছে ৭ দিনের মধ্যে মেয়রের কাছে তার উত্তর জানতে চেয়েছেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “অবৈধ নির্মাণ যেগুলি রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে তা বহু পুরনো, বাম জমানায় তৈরি। এমনকী আমার বাড়ির পাশে একটি নার্সিংহোমের ক্ষেত্রে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গোটা শহর জুড়ে থাকা সে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ গুড়িয়ে দেওয়া হবে কি না সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লিখিত ভাবে তৃণমূলের কাউন্সিলররা যে সমস্ত বিষয় জানতে চেয়েছেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে। দলের কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদদের সঙ্গে আলোচনা করে তা শীঘ্রই জানিয়ে দেব।’’ |
অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে কোন বাধা বরদাস্ত করা হবে না তা বরাবরই বলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর নির্দেশের পর বারকয়েক অভিযান হয়। সম্প্রতি আলুপট্টি এলাকায় এক ব্যবসায়ীর অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে অভিযান চালানো হলে তিনি বাধা দেন। অভিযানে সামিল ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা এবং পুরসভার এক বাস্তুকারের বিরুদ্ধে ওই ব্যবসায়ী মামলাও করেন। পুরসভার তরফে অভিযোগ পেয়ে ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অথচ ব্যবসায়ীকে ছাড়াতে থানায় গিয়ে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন কংগ্রেসের মেয়র পারিষদ এবং কাউন্সিলরদের একাংশ। তা নিয়ে দু’ পক্ষের চাপানউতোর শুরু হয়। বন্ধ হয়ে পড়ে প্রথম দফায় অভিযানের তালিয়া থাকা ২৯ টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ। যদিও প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে পুর কতৃর্পক্ষের কাছে।
মেয়র অবশ্য জানিয়েছেন, কংগ্রেসের মেয়র পারিষদরা যথাযথ ভাবেই কাজ করছেন। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরসভার পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। তৃণমূল কাউন্সিলরদের তরফে ডেপুটি মেয়র বলেন, “বিভিন্ন অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। বস্তি উন্নয়নের কাজ থমকে পড়েছে। যত্রতত্র হোর্ডিং লাগিয়ে দৃশ্য দূষণ করা হলেও সে ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শূন্য পদে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে না। ঠিকাদারদের একাংশের বিল মেটানো সম্ভব হলেও তা অযথা দেরি করা হচ্ছে। পুরসভার একাংশ কর্মী, আধিকারিকদের গাফিলতিও এর জন্য দায়ী। তাঁরা কাজ করছেন না উল্টে অন্তর্ঘাতের চেষ্টা করছেন।”
বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম অবশ্য এ দিন তৃণমূল কাউন্সিলরদেরঅভিযোগ জানাতে যাওয়ার বিষয়টিকে ‘নাটক’ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাসিন্দারা যাদের পুর বোর্ড চালাতে ভার দিয়েছেন তাঁরা কী করছেন সকলেই দেখছেন।” এ দিন মেয়রের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন উন্নয়নরকাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বামেরাও।
শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়রকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা। |