নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
‘লন্ডনে’র মেঘ ছিনতাই করে বৃষ্টি পেয়ে গেল ‘সুইৎজারল্যান্ড’! ‘লন্ডনে’র হাঁসফাঁস অবস্থা কিন্তু এখনও অব্যাহত!
কলকাতাকে ‘লন্ডন’ আর দার্জিলিংকে ‘সুইৎজারল্যান্ড’ বানানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ‘লন্ডনে’র রাতের আকাশ ঢেকে থাকছে কালো মেঘে। গুমোট আবহাওয়ায় অস্বস্তি বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই। কিন্তু এক ফোঁটাও বৃষ্টি হচ্ছে না। কারণ মেঘ গিয়ে জমাট বাঁধছে হিমালয়ের পাদদেশে। ভারতের ‘সুইৎজারল্যান্ড’ তরাই ও ডুয়ার্সে তাই তৈরি হয়েছে বৃষ্টির পরিস্থিতি। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও দার্জিলিং পাহাড়ে ভালই বৃষ্টি হচ্ছে।
কলকাতার মেঘ উড়ে উত্তরে চলে যাওয়ায় ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার গরম বাতাস ঢুকে পড়ছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ফলে পশ্চিমের জেলাগুলিতে ফের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির মাত্রা ছাড়িয়েছে মঙ্গলবার। ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন মালদহ ফের এ দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাঁকুড়া ও বীরভূমে তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে যথাক্রমে ৪২ এবং ৪১ ডিগ্রিতে। সেখানে আজ, বুধবারের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং মধ্য ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এখন তাপপ্রবাহ চলছে। সেই তাপপ্রবাহের ধাক্কায় গরম ও শুকনো বাতাস চলে এসেছে দক্ষিণবঙ্গের লাগোয়া জেলাগুলিতে। আজ, বুধবার মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বর্ধামান শিল্পাঞ্চলে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছি আমরা। তাপপ্রবাহ বইবে মালদহেও।”
গত সপ্তাহে কলকাতার তাপমাত্রা এক দিন ৪০.৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল। চলতি মরসুমে ওই এক দিনই তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল কলকাতা। কলকাতায় এখনই আর তাপপ্রবাহের আশঙ্কা দেখছেন না আবহবিদেরা। কিন্তু তার বদলে যে পূর্বাভাস আলিপুর আবহাওয়া দফতর দিচ্ছে, তা-ও মহানগরবাসীদের কাছে মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, কলকাতায় হাওয়া বইবে। রাতে মেঘ ঢুকবে, কিন্তু বৃষ্টি হবে না। মেঘের জন্য তাপমাত্রা খুব বাড়বে না। কিন্তু আর্দ্রতা বেশি থাকায় বেড়ে যাবে অস্বস্তি। |
এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়েনি। কিন্তু আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্তিসূচক বেড়ে হয়েছে ৬৫ ডিগ্রি। যা স্বাভাবিকের থেকে ১০ ডিগ্রি বেশি। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি। কিন্তু ওই দিনও অস্বস্তিসূচক উঠে গিয়েছিল ৬৪ ডিগ্রিতে। গত ১০ দিনে কলকাতার অস্বস্তিসূচকের মাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৬৪ থেকে ৬৯ ডিগ্রিতে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াতেই এই অবস্থা বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
এই অস্বস্তিকর আবহাওয়ার জন্য ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও শারীরবিদেরা। তাঁরা বলছেন, জ্বর-সর্দি-কাশির কারণ মূলত দু’টি। বাতাসে এখন এক ধরনের ভাইরাস খুবই সক্রিয়। সেই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত সংক্রামিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস। সর্দি-জ্বর-কাশির অন্য কারণ হল, গরম থেকে এসে ঠান্ডায় বসা কিংবা অস্বস্তি কাটাতে বাইরে থেকে ঘুরে এসে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খাওয়া। কোল্ড ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জীবাণু বিশেষজ্ঞদের জানা নেই। তবে জীবাণু আক্রমণ করলে তা ঠেকানোর জন্য অ্যান্টিব্যায়োটিকের দাওয়াই রয়েছে। যাঁর শরীর যত বেশি কাহিল হয়ে পড়ে, তাঁকে ভাইরাস তত দ্রুত আক্রমণ করে। তাই শরীর যাতে সহজে কাহিল না হয়, তার জন্য নুন-চিনির সরবতকেই সব থেকে ভাল দাওয়াই বলে চিহ্নিত করেছেন জীবাণু বিশেষজ্ঞেরা। গরমে সুস্থ থাকতে রাজ্যের মানুষকে ঠিক একই পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এ রকম কত দিন চলবে? প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে অবধি মহানগরীর আবহাওয়া এমনই থাকবে বলে আবহবিদরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তাতে স্বস্তি ফিরবে না। আর প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি কবে হবে, তা নিয়ে তাঁরা এখনও ধন্দে। এক আবহবিদের মন্তব্য, “আন্দামানে বর্ষা না ঢুকলে এ ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিতই দেওয়া সম্ভব নয়।” |