নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ সময়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ হল। আগামী চার বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হলেন অধ্যাপক সুরঞ্জন দাস।
বাম আমলের পদ্ধতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট নয়, সুরঞ্জনবাবুকে বাছাই করেছে তিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটি। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে নয়া সরকার ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছিল, উপাচার্য বাছাই হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাতে এই ক্ষেত্রে কোনও দলীয় প্রভাবের অনুপ্রবেশ না ঘটে। কারণ, দীর্ঘকাল ধরেই
|
সুরঞ্জন দাস |
এ রাজ্যের শিক্ষাজগতে অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট নয়, প্রকৃত পক্ষে উপাচার্য নিয়োগ হত আলিমুদ্দিন থেকে। সেই ব্যবস্থা বদলে ফেলার জন্য নয়া সরকার এসেই বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে গড়া সার্চ কমিটি মারফত উপাচার্য বাছাইয়ের বন্দোবস্ত করে। ইতিহাসের অধ্যাপক সুরঞ্জনবাবু সেই প্রক্রিয়ার প্রথম বাছাই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোঁজার কমিটিতে ছিলেন ইতিহাসবিদ মুশিরুল হাসান, সমাজতত্ত্ববিদ আন্দ্রে বেতেই এবং পরমাণু বিজ্ঞানী অনিল কাকোদকর।
২০০২ থেকে ২০০৮-এর এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে ছিলেন সুরঞ্জনবাবু। ২০০৮-এর ১ মে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। এ বছর ৩০ এপ্রিল তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ছ’মাসের জন্য তাঁর কার্যকাল বাড়ানো হয়। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সার্চ কমিটি তিন জনের নাম সুপারিশ করে। আচার্য তথা রাজ্যপাল সুরঞ্জনবাবুকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।
তাঁদের আমলে নিযুক্ত উপাচার্য অত্যন্ত উঁচু মানের সার্চ কমিটি দ্বারা পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় রাজ্যের প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “প্রথম বার সার্চ কমিটি ছাড়াই উপাচার্য হয়েছিলেন সুরঞ্জনবাবু। এ বার সার্চ কমিটির মাধ্যমেও তিনি এলেন। এতে প্রমাণ হয়, বামফ্রন্ট মেধার সঙ্গে আপস করে দলীয় আনুগত্যের বিচারে উপাচার্য বসায়নি।” সুরঞ্জনবাবু নিজেও প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে একমত। এ দিন সুরঞ্জনবাবু বলেন, “যে সার্চ কমিটি মারফত উপাচার্য বাছাই হয়েছে, সেটা অত্যন্ত উঁচু মানের কমিটি। তা ছাড়া, আমি প্রথম বার বাম আমলে নিযুক্ত হয়েছি মানে তো এটা নয় যে আমার মেধা নেই। এখন সরকার বদলের পরেও ফের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হলাম। এতে বোঝা গেল, মেধাই আসল। দল গুরুত্বহীন।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “উপাচার্য বাছাই করেছে সার্চ কমিটি। এতে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তবে আগের জমানায় ওঁর যে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল, এই জমানায় সেটা থাকবে না। খোলা মনে কাজ করতে পারবেন।” যদিও আগের জমানায় কোনও ধরনের ‘বাধ্যবাধকতা’ ছিল, এমন অভিযোগ অমূলক বলে দাবি সুদর্শনবাবুর।
এ দিনই আবার বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক কৌশিক গুপ্ত। আগের উপাচার্য অশোকরঞ্জন ঠাকুরের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েছে রবিবার, ২০ মে। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “সার্চ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কে হবেন, তা এখনও জানানো হয়নি। তাই কমিটি গড়া যায়নি। কৌশিকবাবুকে ছ’মাসের জন্য উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” |