মার খাচ্ছে রাজস্ব
মিটার রিডিংয়ে ফাঁকি রোধে জরিমানার পথে বণ্টন
বাড়িতে বসে ‘গড়পড়তা’ হিসেবে বিদ্যুৎ-গ্রাহকের ‘মিটার রিডিং’ লিখে দেওয়ার দিন এ বার ফুরোচ্ছে।
নিয়ম হল, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে গ্রাহকের মিটার দেখে সেই মতো রিডিং লিখে পাঠাতে হবে। যা দেখে তৈরি হবে বিদ্যুতের বিল। কিন্তু রাজ্যে ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না দেখে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। বণ্টন-সূত্রের দাবি: সেই তদন্তেই ধরা পড়েছে, মিটার দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাগুলির অনেক কর্মী স্রেফ বাড়িতে বসে গড়পড়তা ‘রিডিং’ তৈরি করছেন। ফলে মার খাচ্ছে রাজস্ব। এই ‘ফাঁকিবাজি’র দাওয়াই হিসেবে ভুল মিটার রিডিং পাঠানো হলে সংস্থাগুলোকে এ বার আর্থিক জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বণ্টন-কর্তৃপক্ষ।
বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে বলেন, “যে সব সংস্থা মিটার দেখে রিডিং পাঠাচ্ছে, তাদের আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। নচেৎ লোকসানের ভাগীদার হতে হবে তাদেরও। তাই আর্থিক জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” এতেও পরিস্থিতি না-বদলালে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কাজের চুক্তি বাতিলই করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর: বাড়িতে বসে বসে গ্রাহকদের নামে মিটার রিডিং লিখে দেওয়ার ‘ব্যাধি’ বহু পুরনো। সাবেক রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের আমলেও সংস্থার বার্ষিক লোকসানের পিছনে বড় কারণ ছিল গ্রাহকপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার ও বিল আদায়ের পরিমাণে বিস্তর ফারাক। তখন পর্ষদের কর্মীরাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নিতেন। কিন্তু সেখানেও ছিল ফাঁকিবাজি। পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ ‘ফাঁকিবাজ’ কর্মীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নির্দেশিকাও জারি করেছিলেন। তাতেও কাজ না-হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েতকে দেওয়া হয়েছিল মিটার দেখে বিল বানানোর দায়িত্ব। এই ব্যবস্থাও বিশেষ কার্যকর হয়নি। শেষমেশ বেসরকারি সংস্থাকে মিটার রিডিংয়ের দায়িত্ব দেয় পর্ষদ।
এবং পর্ষদ ভেঙে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা গঠনের পরেও দেখা যাচ্ছে, পুরনো রোগ তো সারেইনি, বরং আরও ছড়িয়ে পড়েছে। বণ্টন-সূত্রের খবর: গ্রামাঞ্চলে বাড়িপিছু আড়াই টাকা ও শহরে বাড়িপিছু দু’টাকা কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা রিডিং নেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে। “কিন্তু আমাদের ৪৭৮টি ডিস্ট্রিবিউশন এলাকায় ১৫%-১৮% আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে শুধু মিথ্যে বা গড়পড়তা মিটার রিডিং নেওয়ার কারণে। বহু জায়গায় তো মাসের পর মাস মিটার দেখতে যাওয়াই হয় না!” আক্ষেপ এক বণ্টন-কর্তা।
‘ফাঁকিবাজি’ ধরা যাবে কী ভাবে?
এক বিদ্যুৎ-কর্তা বলেন, স্টেশন ম্যানেজার, ডিভিশনাল ম্যানেজার ও রিজিওনাল ম্যানেজারকে মাথায় রেখে বণ্টন সংস্থার কর্মীদের নিয়ে টিম গড়া হচ্ছে। দলটি প্রতি দিন বিভিন্ন অঞ্চলে ঘরে-ঘরে মিটার পরীক্ষা করবে। পাশাপাশি রিডিংও নেবে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘সাত-আট মাস এই প্রক্রিয়া চললেই কোন গ্রাহক মাসে মোটামুটি কতটা বিদুৎ খরচ করেন, তার একটা আন্দাজ মিলবে। মিটারে দোষ-ত্রুটি কিছু থাকলে তা-ও ধরা পড়বে।” বেসরকারি সংস্থা যেমন মিটার রিডিং পাঠাচ্ছে, পাঠাবে। পরে বিশেষ সফটওয়্যারে ফেলে দু’পক্ষের নেওয়া রিডিং তুলনা করা হবে। কর্তাটির দাবি, তাতেই মালুম হবে, কোথায় কতটা গলদ। ভুল ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে ইউনিটপিছু ২-৪ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এতেও কি ‘ফাঁকিবাজি’ রোখা যাবে?
বণ্টন সংস্থার কর্তাদের যুক্তি: শাস্তিমূলক ব্যবস্থার একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকবেই। উপরন্তু টানা এক বছর প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে পারলে প্রতি গ্রাহকের গড় বিদ্যুৎ খরচের একটা অভ্যেস-ভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা সম্ভব। যার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে ভুল রিডিং ঠেকানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে সংস্থা আশাবাদী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.