বামেদের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে আপন মতেই চলছেন বেপরোয়া অনিল
নিল বসুকে নিয়ে সিপিএমের ‘বিড়ম্বনা’ কমা তো দূরের কথা, বেড়েই চলেছে ক্রমশ।
রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ার পরে তিন মাসের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন আরামবাগের ‘দাপুটে’ নেতা অনিলবাবু। কিন্তু তার পরেও জেলায় দলের নানা কর্মসূচিতে তাঁকে হাজির থাকতে দেখা যাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার চুঁচুড়ার ঘড়িমোড়ে হুগলি জেলা বামফ্রন্ট যে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে, তাতেও কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না! সেখানেও মঙ্গলবার হাজির ছিলেন অনিলবাবু। সকালে চুঁচুড়া স্টেশন থেকে যে বিশাল মিছিল বেরোয়, তার সামনের সারিতেই দেখা গিয়েছে আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদকে। এক পাশে ছিলেন জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী। অন্য পাশে আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্ত। অনিলবাবুর ‘অন্যতম সহযোগী’ বলে পরিচিত এই নেতার বিরুদ্ধেও দলের ভাবমূর্তি ‘ভূলুণ্ঠিত’ করার অভিযোগ উঠেছে বারে বারে। অনিলবাবুকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তাঁকে ‘তিরস্কার’ করে দল।
সাসপেন্ড হওয়ার পরেও কেন বামফ্রন্টের কর্মসূচিতে সামিল হলেন অনিলবাবু? এই প্রশ্নের জবাবে সুদশর্নবাবু এ দিন বলেন, “উনি সাসপেন্ড হয়েছেন বলে তো জানি না!” সাংবাদিকদের উদ্দেশে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “আপনাদের কে বলল এ কথা?” প্রসঙ্গত, রাজ্য কমিটি অনিলবাবুকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়ার পর থেকেই সুদর্শনবাবু বলে আসছেন, তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না।
চুঁচুড়ায় বামফ্রন্টের মিছিলে অনিল বসু। পাশে রয়েছেন সুদর্শন রায়চৌধুরীও। নিজস্ব চিত্র
দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ ‘বিতর্কিত’ নেতা অনিলবাবুর বিরুদ্ধে যতই কড়া পদক্ষেপ করতে চান না কেন, হুগলি জেলা সিপিএমের কিছু সমীকরণের জন্য জেলায় বরাবরই তিনি নেতৃত্বের একাংশের সমর্থন পেয়েছেন। আরামবাগে এক কালের ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ অনিলবাবুও পরিস্থিতির ‘ফায়দা’ তুলছেন। রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিলেও সে সবের তোয়াক্কা করছেন না তিনি। উল্টে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রবীণ এই নেতা দল ও দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। রাজ্য সম্পাদকের উদ্দেশে কটাক্ষ অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর এই ‘বেপরোয়া’ মনোভাবকে ভবিষ্যতে দল কী ভাবে মোকাবিলা করে, তা নিয়েই কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে দল এবং বামফ্রন্টের অন্দরে।
মিছিলে হাঁটলেও অনিলবাবুকে এ দিন মঞ্চে অন্য নেতাদের সঙ্গে একাসনে বসতে দেখা যায়নি। বক্তৃতা শুরুর আগে মিনিট কয়েকের জন্য মঞ্চে উঠে পাখার হাওয়া খেয়েছেন তিনি। তার পর নেমে এসে মঞ্চের সামনে পাতা ত্রিপলের উপরে বসে পড়েন। সেখানে ছিলেন কয়েকশো ‘ঘরছাড়া’ বাম নেতা-কর্মী। যাঁদের ঘরে ফেরানোর দাবিতেই বামেদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি। মাটিতে বসেও অনিলবাবু ছিলেন দিব্যি খোশ মেজাজে! বললেন, “মঞ্চে খুব গরম! এখানেই ভাল আছি।” বাম নেতাদের সঙ্গে অবশ্য এ দিন বিশেষ কথা বলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
হুগলি জেলার অন্য বাম দলগুলির নেতৃত্ব অনিলবাবুকে নিয়ে বেশ ‘অস্বস্তি’তে। আরএসপি-র জেলা সম্পাদক সমর সামন্ত বলেন, “আমাদের দলে এমন হলে মেনে নিতাম না। তবে এটা অন্য দলের ব্যাপার। কিছু বলার নেই।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক নৃপেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “অন্য দলের ব্যাপার। মন্তব্য করব না।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন পাল তাঁদের দলের এক বহিষ্কৃত নেতার উদাহরণ টেনে এনে বলেন, “উনিও পরে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা আমল দিইনি।” হুগলি জেলা বাম নেতৃত্বের একটা বড় অংশেরই মত, ফ্রন্টের কর্মসূচিতে অনিলবাবু না-এলেই ভাল হত। তাঁদের মতে, কমিউনিস্ট পার্টিতে ‘শৃঙ্খলা’ একটা বড় ব্যাপার। তার সঙ্গে যে ভাবে ‘আপস’ করা হচ্ছে, তা উচিত নয়।
বাম নেতৃত্ব এ দিন তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে আগাগোড়াই সরব থেকেছেন। রাজ্যের প্রধান শাসক দলের অত্যাচারেই বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাঁদের প্রায় ১৬০০ নেতা-কর্মী বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ। যে কথা অবশ্য মানতে চাননি হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিন মঞ্চে হাজির ছিলেন প্রবীণ বাম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। গত বিধানসভা ভোটের প্রচার-পর্ব থেকেই তাঁকে আবার বামফ্রন্ট বা দলের অনুষ্ঠানে ডাকছে সিপিএম। অশোকবাবু বলেন, “রাজ্যে এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। রোজ খুন-রাহাজানি-মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে। অথচ কথা বলার, প্রশ্ন করার অধিকার নেই!” রাজ্যে কৃষক মৃত্যু নিয়ে প্রবীণ নেতার কটাক্ষ, “ফসলের ন্যায্য দাম না-পেয়ে চাষি আত্মহত্যা করছেন। অথচ খবরের কাগজে সে কথা বেরোলে বলা হচ্ছে, সব মিথ্যা! যেন কেউ মারা যাননি, মারা যাওয়ার ভান করছেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.