তিন বছর আগে পুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্পের (পিপিএসপি) জলাধারের নীচে প্রাণ হারিয়েছিলেন মেরিন সুপারভাইজার মুকেশ কুমার। তাঁর মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে এ বার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন মুকেশের স্ত্রী কুসুম। এক দিকে স্বামী হারানোর যন্ত্রণা, অন্য দিকে দুই ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও ফল না হওয়ায় ২০১০ সালের মার্চে বাঘমুণ্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কুসুম। কারণ, ঘটনাস্থল ছিল অযোধ্যা পাহাড়, ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে যা বাঘমুণ্ডি থানার অধীন।
অযোধ্যা পাহাড়ে এই ‘পাম্পড স্টোরেজ’ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি জলাধারে কিছু কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তা মেরামত করার জন্য মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। ওই সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমুন্দ্রির ওই সংস্থা থেকে তিন ডুবুরি-সহ সাত জনের একটি দল পুরুলিয়ায় পৌঁছয়। ১৩ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জলাধারের সুড়ঙ্গে কারিগরি ত্রুটি খুঁজতে নেমেছিলেন দলটির ‘মেরিন সুপারভাইজার’, সাতাশ বছরের মুকেশ কুমার। |
সাকশন পাইপের গর্তে তাঁর পা আটকে যায়। তাঁকে উদ্ধারের ব্যাপারে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বা ডুবুরি সংস্থা, কারও তরফেই যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ওঠে। উদ্ধার কাজ শুরু হতেই ত্রিশ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বর করাত দিয়ে মুকেশের আটকে থাকা ডান পা কেটে ফেলে তাঁর দেহ উপরে টেনে আনেন ডুবুরিরা। ডান পা সুড়ঙ্গের গর্তে রেখেই ময়না তদন্তের পর তাঁর দেহ রওনা দেয় হরিয়ানার পারনালা গ্রামে, মুকেশের বাড়ি যেখানে।
মুকেশের স্ত্রী কুসুমের কথায়, “প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে শুনেছি ওখান থেকে বেরিয়ে আসা যে শক্ত, তা আমার স্বামী জানতেন। ওঁর সঙ্গে নীচে নামা সহকর্মীকে বলেছিলেন, পা কেটে বের করে আনতে। কিন্তু ওর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুও ওকে দেওয়া যায়নি। এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।” পারনালা গ্রামে সেলাইয়ের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান কুসুম। বাবা দীপচাঁদও এ দিন এসেছিলেন। তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণের জন্য বিশাখাপত্তনমের যে সংস্থায় মুকেশ কাজ করত, সেখানে এবং মুম্বইয়ের যে সংস্থার হয়ে ও এখানে এসেছিল, সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। কেউ কিছু করেনি।” কসুম বলেন, “যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানেই অভিযোগ জানিয়েছি। এ বার আইন বলবে কোথা থেকে ক্ষতিপূরণ পাব।”
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “আমি ওই ভদ্রমহিলার আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি দেখা হবে।” কুসুম তাঁর লিখিত অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন মুম্বই ও বিশাখাপত্তনমের সংস্থার পাশাপাশি পিপিএসপি কর্তৃপক্ষকেও। পিপিএসপি-র প্রজেক্ট সাইট ইনচার্জ তরুণ মিত্র জানান, তিনি ওই সময় এখানে ছিলেন না। তবে ঘটনাটি শুনেছেন। তাঁর কথায়, “যতদূর জানি যে সংস্থাকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদেরই পুরো কাজটা করার কথা ছিল। অল্পদিন দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে পুলিশ আমার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেনি।” রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “সবে বিষয়টি শুনলাম, খোঁজ নেব।” |