এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে এক মহিলা-সহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের ছেলেও রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ ব্যবসায়ীর নাম মণ্টু বিশ্বাস। তাঁর বাড়ি মিনাখাঁ থানার ঘোনারবন গ্রামে। সোমবার সকাল থেকেই তিনি নিখোঁজ। ওই দিন রাতেই ফোন করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন মণ্টুবাবুর দাদা লাল্টু বিশ্বাস। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে আটক তিনজন-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে মঙ্গলবার দুপুরে হাসনাবাদ থানার পুলিশ ভেবিয়া থেকে তিনজনকে আটক করে। আটক তিনজন অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মণ্টুবাবু মেছোভেড়ির ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি তিনি কলকাতায় একটি মোবাইল ফোন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন ও ফোন বিক্রি করা ছিল তাঁর কাজ। সোমবার সকালে তিনি অফিসে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বের হন। কলকাতার পোস্তায় যে মোবাইল সংস্থায় মণ্টু কাজ করতেন তার মালিক নবনীত অগ্রবাল পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ মণ্টু অফিসে আসেন। ওঁকে ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে বিবেকানন্দ রোডের একটি ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার জন্য পাঠান। তার পর থেকে ওঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনের স্যুইচও বন্ধ। এর পরে তিনি জোড়াবাগান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। বিকেল ৪টে নাগাদ সংস্থার এক কর্মী ফের মণ্টুকে ফোন করলে মণ্টু জানান, তাঁকে গণেশ টকির কাছে কোনও এক জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ না দিলে তাঁকে ছাড়া হবে না। এর পর ওই দিনই বিকেলে ভেবিয়ার বাসিন্দা তোতন দে নামে এক যুবক ওই মোবাইল সংস্থার তিন কর্মীকে নিয়ে দু’টি মোটর সাইকেলে করে মণ্টুর খোঁজে তাঁর বাড়ি যান। তাঁরা মণ্টুর পরিবারের লোকদের জানান, ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার জন্য মণ্টুকে ৮৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই টাকা-সহ তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা শোনার পরেই মণ্টুর পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন। মণ্টুর এক ভাই রাজীব বিশ্বাস মিনাখাঁ ব্লক যুব কংগ্রেসের সভাপতি। রাজীববাবু বলেন, “মাস দেড়েক আগে বন্ধুত্বের খাতিরে দাদাকে কলকাতায় কাজ ঠিক করে দেয় তোতন। তোতনই জানায় দাদাকে অপহরণ করা হয়েছে।” দাদা লাল্টুবাবু বলেন, “বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও মণ্টুর সঙ্গে সান্ত্বনা দাস নামে ভেবিয়ার এক মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। পরিবারের তরফে বহুবার এ জন্য মণ্টুকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তা শোনেনি মণ্টু। সোমবারই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সান্ত্বনা বাড়িতে ফোন করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মণ্টুকে ছাড়িয়ে আনার কথা বলে। এমনকী বিষয়টি পুলিশকে জানালে মণ্টুকে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেয়।”
এর পরেই মঙ্গলবার সকালে মণ্টুর বাড়ির লোকজন তোতন ও সান্ত্বনাদেবীর বাড়ি যান। তোতনকে না পাওয়া গেলেও সান্ত্বনাদেবীকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সান্ত্বনাদেবীর বক্তব্য, “মণ্টুর এক বন্ধু সফিকুল গাজি তাঁকে জানান মণ্টুকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি তখন মণ্টুর বাড়িতে খবর দেন। মুক্তিপণ চাওয়া বা খুনের হুমকির অভিযোগ মিথ্যা।”
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাটি অপহরণ নাকি এর পিছনে অন্য কারণ আছে তার তদন্ত হচ্ছে।” |