সোমবার রাত থেকে নিখোঁজ মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের এক কংগ্রেস কর্মী বাপি ঘোষ। শহরে দলের ৪ নম্বর বুথ কমিটির সভাপতি বাপিবাবুর সাইকেল ও চটি পাওয়া গিয়েছে বহরমপুর সদর হাসপাতাল লাগোয়া একটি শিবমন্দির থেকে। সেখানে রক্তের চিহ্নও মিলেছে। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “বাপিবাবু এক জন সমাজসেবী ছিলেন। তাঁকে খুন করা হয়েছে। তবে কে বা কারা তাঁকে খুন করেছে, তা আমরা জানি না। পুলিশ তদন্ত করে খুঁজে বার করুক।”
বাপিবাবুর স্ত্রী সবিতা ঘোষও বলেন, “আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে বলেই আশঙ্কা করছি।” মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর নিয়ে যাওয়া হয়। রক্তের ঘ্রাণ নেওয়ার পরে মন্দির চত্বর থেকে কুকুর গিয়ে পৌঁছয় প্রায় ২৫০ মিটার দূরে ভাগীরথী পাড়ে। এরপরে পুলিশ নদীতে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। তবে বাপিবাবুর দেহের হদিস মেলেনি। অধীর বলেন, “বাপিবাবুর দেহ খুঁজে না পাওয়াটা পুলিশের ব্যর্থতা। তাঁর খুনের কিনারার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করছি আমরা।” বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার বহরমপুর শহরে ১২ ঘণ্টা বন্ধ ডেকেছে কংগ্রেস। জেলার এসপি হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাপিবাবুর বাড়ির লোক তাঁকে খুন করা হয়েছে বলেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা তাই খুনের মামলা রুজু করেছি। তবে তাঁর দেহের হদিস মেলেনি।”
বাপিবাবুর জেনারেটরের ব্যবসা ছিল। তবে দলের নির্দেশে তিনি রোজ সদর হাসপাতালে গিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগী ও রোগীর পরিবারদের সাহায্য করতেন। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “হাসপাতালে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে কংগ্রেসের তরফে কয়েক বছর আগে থেকে এই ব্যবস্থা শুরু হয়। বাপিবাবু গোড়া থেকেই সেই কাজ করতেন।”
বাপিবাবুর বাড়ি শহরের ভাগীরথী পাড়ের সুভাষ কলোনিতে। রোজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি হাসপাতালে যেতেন। দুপুর দু’টো নাগাদ বাড়ি ফিরে ফের হাসপাতালে যেতেন সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ১১টা বেজে যেত। সবিতাদেবী বলেন, “ওই রাতে স্বামী বাড়ি না ফেরায় তাঁর মোবাইলে ফোন করতে থাকি। কখনও লাইন পাইনি, কখনও মোবাইল ‘বন্ধ’ বলছিল।” রাত দু’টো নাগাদ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর খোঁজে হাসপাতালে যাওয়ার পথে ওই শিবমন্দিরে বাপিবাবুর সাইকেল দেখতে পান তাঁরা। সবিতাদেবী বলেন, “মন্দিরের সামনে মদের ভাঙা বোতল পড়েছিল। স্বামী মদ খেতেন না। চাপ চাপ রক্তও পড়েছিল সেখানে।” তিনি বলেন, “স্বামীকে খুন করে ভাগীরথীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা।” এই হাসপাতালেরই মাতৃসদন থেকে প্রায় এক দশক আগে ডিওয়াইএফের কর্মী ঝন্টু দাসও নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর দেহ এখনও মেলেনি। সেই ঘটনায় কেউ দোষীও প্রমাণিত হননি। |