দুর্ঘটনায় মৃত্যু মেয়ের বাবা-মার
আসরে এসে কন্যাদান করলেন পুলিশ সুপার
নের শাড়ি, গয়না সব এসেছে? বরের জিনিসপত্র? খাওয়া-দাওয়ার দিকটা ঠিক আছে তো?
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বেলদার বাখরাবাদে পোদ্দার বাড়িতে ঘন ঘন ফোন। কখনও ফোন করছেন থানার ওসি, কখনও এসডিপিও। যেন তাঁরাই কনে-কর্তা। শেষমেশ পুলিশ কর্তাদের উপস্থিতিতেই স্থানীয় মন্দির চত্বরে চার হাত এক হয়ে গেল। আসরের তত্ত্বাবধানে খোদ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। পুলিশের সাহায্যেই নতুন জীবনের পথচলা শুরু করলেন সদ্য বাবা-মা হারানো মিতা পোদ্দার।
কী না করেনি পুলিশ! চাঁদা তুলে বিয়ের টাকা জোগাড় থেকে শুরু করে বরের পোশাক, কনের সোনার আংটি থেকে কন্যা সম্প্রদানসবই হল পুলিশ কর্তা-কর্মীদের হাত ধরে। ‘চেনা’ পুলিশের এমন ‘অচেনা’ ভূমিকা দেখে অভিভূত এলাকাবাসী বলছেন, “পুলিশ এমনও হয়!”
আসলে গত শুক্রবার সকালের দুর্ঘটনাটা যে আপাত-কঠিন পুলিশের মনকেও এ ভাবে নাড়িয়ে দেবে, তা কে-ই বা ভেবেছিল? ওই দিন বাড়ির পাশেই, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বুলেভার্ডে তিল শুকোতে দিয়েছিলেন মিতার বাবা সুকুমার পোদ্দার ও মা দীপালিদেবী। বেলদা থেকে খড়্গপুরগামী একটি গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান সুকুমারবাবু। বেলদা ব্লক হাসপাতালে মৃত্যু হয় দীপালিদেবীর। আকাশ ভেঙে পড়ে পোদ্দার পরিবারে। উদ্বিগ্ন গোটা গ্রাম। চার দিন বাদেই মেয়ের বিয়ে। তার আগেই অনাথ হল। বিয়েটা হবে তো!
বেলদায় নবদম্পতির সঙ্গে পুলিশ সুপার (সবুজ জামা), অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার (নীল জামা) এবং এসডিপিও (সাদা জামা)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বছর তেইশের মিতা শোকবিহ্বল। দিদি রিতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মিতার ভাবনা হচ্ছিল সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ভাই অমরনাথকে নিয়ে। বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল নয়। সুকুমারবাবু মুদি দোকানে কাজ করতেন। সঙ্গে ভাগচাষ। চেয়েচিন্তেই ছোট মেয়ের বিয়ের আয়োজন করছিলেন। দুর্ঘটনায় সুকুমারবাবু ও দীপালিদেবীর মৃত্যুতে সব কিছুর তাল কেটে যায়। উদ্বেগে ছিল পাত্র দীনবন্ধু সিংহের পরিবারও। সোমবারই সুকুমারবাবু ও দীপালিদেবীর শ্রাদ্ধ মিটেছে। আর মঙ্গলবার বিয়ে। এমন একটা পরিস্থিতি যে আসতে পারে, ভাবেননি জামবনির লক্ষ্মীপালের বাসিন্দা দীনবন্ধুরা। একটা আশঙ্কাই বড় হয়ে ওঠে বিয়ে কি পিছোতেই হবে?
এমনই এক অবস্থায় সহায় হল পুলিশ। তারা জানাল, নির্দিষ্ট দিনেই বিয়ে হবে। মিতার বিয়ের বন্দোবস্ত করতে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন বেলদার ওসি পলাশ মিত্র। গ্রামেরই কয়েক জনকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হল। কেউ সামলালেন ডেকরেটরকে, কারও ঘাড়ে পড়ল খাওয়া-দাওয়া দেখভালের দায়িত্ব। পুলিশকর্মীরা চাঁদা তুলে টাকার জোগাড় করলেন। সাধ্যমতো সাহায্য করলেন গ্রামবাসীরাও। স্থানীয় বাসিন্দা রাধাকান্ত দাঁ থেকে মিতার জামাইবাবু মন্টু দত্ত, সকলেই মানছেন, “পুলিশ এ ভাবে পাশে না দাঁড়ালে এ বিয়ে সম্ভব হত না।” ভাই নিয়ে মিতার দুশ্চিন্তাও কিছুটা কেটেছে। আপাতত এক কাকার কাছেই অমরনাথ থাকবে বলে ঠিক হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ন’টা। বরযাত্রী, কনেযাত্রীপোদ্দার বাড়িতে তখন ঠাসা ভিড়। নিমন্ত্রিত শতাধিক। তবে সবাই একটু হলেও জড়োসড়ো। একে দুর্ঘটনার রেশ কাটেনি, তায় ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু খাকি উর্দি! কনেকর্তার ভূমিকায় পুলিশই। ধীরে ধীরে অস্বস্তি কাটল। সকলের সঙ্গে বসেই পাত পেড়ে পুলিশকর্মীরা খেলেন ভাত-ডাল-বেগুনি-আলুপোস্ত-আলুপটলের তরকারি। শেষ পাতে দই-মিষ্টি। শ্বশুরবাড়ির সবাই তো পুলিশ, কেমন বুঝছেন? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন বর দীনবন্ধু। রাত সাড়ে ৮টাতেই এসে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। সঙ্গে এসডিপিও (খড়্গপুর) দীপক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) মীরেজ খালেদ। বর-কনেকে আশীর্বাদ করলেন পুলিশ সুপার। নিজের মেয়ে নেই, একটিই ছেলে। পুলিশ সুপার বললেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই উদ্যোগ। কন্যাদানও করলাম।”
বিয়ের আসরেও চোখে জল মিতার। নতুন শাড়ির আঁচলের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে নববধূ বললেন, “বাবা-মা’র কথা খুব মনে পড়ছে। কিন্তু সে অভাব ওঁরা (পুলিশ) অনেকটা বুঝতে দেননি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.