মণিপুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। এমনকী রেহাই নেই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও। নাবালক নিগ্রহ ও মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। প্রকৃত অবস্থা কী তা খতিয়ে দেখতে এই প্রথম রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। দু’ দিন ধরে রাজ্যের নানা অংশে শিশু অধিকার ভঙ্গের বিষয়ে খুঁটিয়ে খোঁজখবর নিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন শান্তা সিংহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা কার্তিকেয়ন ও বিশেষ উপদেষ্টা এল মিশ্র। মণিপুরে নানা প্রান্তে সংঘর্ষে শিশুমৃত্যু, জঙ্গি সন্দেহে শিশু গ্রেফতার, জঙ্গি সংগঠনে শিশু সৈনিক নিয়োগের বহর দেখে স্তম্ভিত কেন্দ্রীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। কড়া ভাষায় মণিপুর সরকারকে সতর্ক হতে বললেন শান্তা দেবী।
সব কিছু খতিয়ে দেখার পর সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কমিশনের চেয়ারপার্সন। বিশেষ করে, ১৬ বছরের ছেলে আহানথেম আমুজাইয়ের মৃত্যুর ‘প্রকৃত’ ঘটনা জানার পর দৃশ্যতই বিচলিত লাগছিল শান্তা দেবীকে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম ইম্ফলের খুমানপল্লিতে ওই কিশোর ‘সংঘর্ষে নিহত’ হয় বলে দাবি পুলিশের। কিন্তু, আমুজাওয়ের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ও তদন্তের নথি দেখে পুলিশের দাবিতে বিস্তর ফাঁক পেয়েছেন কমিশনের নেত্রী। কম্যান্ডোরা যে ভাবে গুলি করে ওই কিশোরকে মেরেছে কড়া ভাষায় তার নিন্দা করে এ ব্যাপারে অবিলম্বে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, আমুজাওয়ের হত্যা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। অন্য একটি ঘটনায় সম্প্রতি, চান্ডেল জেলায় জঙ্গি যোগসাজশের অভিযোগে এক কিশোরকে রাতভর থানায় আটকে অত্যাচার চালানো হয়েছিল। শান্তা দেবীর মতে, শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী, পুলিশ এই কাজ কখনওই করতে পারে না। এমনকী, আফস্পার আইনও এই কাজকে সমর্থন করে না।
কমিশনের মতে, রাজ্যের উচিত, অবিলম্বে রাজ্য শিশু নীতি গ্রহণ করে শিশু অধিকার সুরক্ষিত করা। এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারেও মণিপুর কোনও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। সীমান্ত চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, মাদক পাচারে শিশুদের ব্যবহার, শিশু পাচারের বাড়বাড়ন্ত, বন্ধ-অবরোধে,বছরের অর্ধেক দিন স্কুল বন্ধ রাখার মত ঘটনায় উদ্বিগ্ন কমিশন মনে করছে, উত্তর-পূর্বে, মণিপুরের শিশুদের অবস্থাই সব থেকে খারাপ। শান্তা দেবী বলেন, “জঙ্গি সংগঠনে শিশু নিয়োগের ঘটনা রাজ্য সরকারকে কড়া হাতে দমন করতে হবে।”মণিপুরের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সচিব বিনোবালা জানান, রাজ্য মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই রাজ্যের জন্য পৃথক শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন গড়ার ব্যাপারে সহমত হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের একটি নোডাল অফিসও গড়ে উঠবে ইম্ফলে। |