নীতি নির্ধারণে সরকারের পঙ্গু দশা নিয়ে সর্বস্তরে তীব্র সমালোচনা, তবু সরকারের ‘সাফল্যে’ খুশি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী দু’জনেই! দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ বললেন, “আমি নিজেও মনে করি, সরকারকে আরও ভাল কাজ করতে হবে। তবে সরকারের সাফল্য নিয়ে কারও সন্দেহ থাকা উচিত নয়।” আর সনিয়া গাঁধীর কথায়, “গত একটা বছর খুব সমস্যার মধ্যে কেটেছে ঠিকই, তবে সরকারের সাফল্য কম করে দেখানোর কোনও সুযোগ দেব না।” সাত রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওই অনুষ্ঠানেই আজ ইউপিএ সরকারের সাফল্যের খতিয়ান সম্পর্কিত রিপোর্টটি প্রকাশ করেন সনিয়া ও মনমোহন।
সরকারের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানের সমালোচনায় ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারের কোন ‘সাফল্য’ সনিয়া-মনমোহন তুলে ধরতে চাইছেন? বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি সরকারের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানকে কটাক্ষ করে বলেন, “বিপর্যয়কে কেউ উদযাপন করে না!” |
শরিকি সমস্যা-সহ একাধিক কারণে গত এক বছরে আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি থেকে শুরু করে সরকারেরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া একাধিক সামাজিক বিল আটকে রয়েছে। বিরোধীরা তো বটেই, শিল্পমহলও এর সমালোচনায় মুখর। সেই সব প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ওই সব ক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা কী ভাবে কাটাবেন, তারও কোনও স্পষ্ট দিশা দেখালেন না সনিয়া-মনমোহন। পরিবর্তে সরকারের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী গোড়াতেই আর্থিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টানলেন। তাঁর কথায়, “বিশ্বজুড়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও গত আর্থিক বছরে ৭% আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে।” খাদ্যদ্রব্যের রেকর্ড উৎপাদনের কথাও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। প্রথম ইউপিএ জমানায় শুরু হওয়া একশো দিনের কাজ, কৃষিঋণের পরিমাণ বাড়ানো, দেশকে পোলিও মুক্ত করার মতো একাধিক ‘সাফল্য’ এ দিন তুলে ধরেন মনমোহন। ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে দেশের লোকের যে হতাশা বাড়ছে, তা-ও কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সুরেই সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন সনিয়া। সেই সঙ্গেই বলেন, “২০১৪ সালে নতুন করে জনাদেশ নেওয়ার আর দু’বছর বাকি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাফল্য মিলবে না। সরকার কেমন কাজ করেছে তার ওপর সাফল্য নির্ভর করবে।”
বস্তুত সরকারের তিন বছর পূর্তি উদযাপনকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই সমালোচনায় নেমেছে বিজেপি ও বামেরা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানকে কটাক্ষ করে বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, “সরকারের যে কোনও সাফল্যই নেই, তা আরও প্রকট হয়ে পড়ল। প্রধানমন্ত্রী তো সরকারের সাফল্য খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো হাতড়াচ্ছিলেন!”
সরকারের সমালোচনা করে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্নীতি দমন ও আর্থিক সঙ্কটের বাতাবরণে আম-আদমিকে সুরাহা দেওয়ার কোনও দিশাই দেখাতে পারেননি সনিয়া-মনমোহন। লোকপাল বিল থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমনের জন্য একাধিক বিল পাশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সনিয়া। কিন্তু সেই সব বিল এখনও ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে। উল্টে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম থেকে শুরু করে সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিত্য নতুন আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে। জেটলির কথায়, “প্রধানমন্ত্রী বড় মুখ করে আর্থিক বৃদ্ধির কথা বলছেন ঠিকই। কিন্তু ঘটনা হল, এই সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ব্যর্থ।” বামেরাও আজ সরকারের সমালোচনা করেছে। সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার একশো দিনের মধ্যে যে কাজ করে দেখাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা-ই এখনও হয়নি। মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়নি। খাদ্য সুরক্ষা বিলও অথৈ জলে। সরকার কোন মুখে বর্ষপূর্তি উৎসব পালন করছে, সেটাই প্রশ্ন।” |