হাম্পি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা
খুললই না দুমড়ে যাওয়া দরজা
ঙ্গলবার রাত তখন সওয়া তিনটে। ভোরের আলো ফুটতে বেশ কিছুটা সময় বাকি। হঠাৎই প্রচণ্ড আওয়াজ। জোরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল ট্রেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল কামরার সব আলো। যাত্রীরা ঘুম চোখে ঠিক কী ঘটেছে তা বোঝার আগেই দেখলেন কামরা জ্বলছে। পড়িমড়ি করে বাইরে বেরোতে গিয়ে দেখলেন পথ বন্ধ। একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে সব দরজা। বেঙ্গালুরুগামী হাম্পি এক্সপ্রেসের প্রথম কামরার মহিলা যাত্রীদের আর্তনাদ শুনেও উদ্ধারকারীদের কারও কিছু করার ছিল না। চোখের সামনে জীবন্ত দগ্ধ হলেন ওই যাত্রীরা।
মঙ্গলবার ভোর রাতে হাম্পি এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির সংঘর্ষে আগুন ধরে যায় প্রথম কামরাটিতে। আগুনের তাপে প্রথম কামরাটির লোহার আস্তরণ গলে গিয়ে তার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত দ্বিতীয় ও তৃতীয় কামরা। গ্যাস কাটার, ক্রেন নিয়ে এসে ক্ষতিগ্রস্ত কামরা থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ২৬। এর মধ্যে ১৬টি দেহই প্রথম কামরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি শিশুর। ৬টি দেহ এত পুড়ে গিয়েছে যে কোনও ভাবেই সনাক্ত করা সম্ভব নয়।
ঘটনাস্থলের কাছে যেতেই দেখা গেল পোড়া মাংসের গন্ধ। চারপাশে ইতস্তত পুলিশ ও রেলকর্মীদের জটলা। এ দিক ও দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চটি, ব্যাগ, খেলনা পুতুল। প্রথম কামরার এক যাত্রী ১৬ বছরের রানি। স্কুলে ছুটি পড়ায় মামার বাড়ি যাচ্ছিল। বলল, “কামরাটা একেবারে ভর্তি ছিল। আগুন ধরার পর যে যে দিকে পারছিল ছুটছিল। কিন্তু দরজা দু’টো এত তুবড়ে গিয়েছিল যে কেউ পালাতে পারল না।” শৌচাগারে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়ে ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে রানি। কিন্তু সবাই যে এত ভাগ্যবান নন।
উল্টে যাওয়া কামরার সামনে অঝোরে কেঁদেই চলেছেন বছর পঁচিশের রঙ্গাম্মা। রেলের কোনও কর্মীকে দেখলেই ছুটে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরছেন। কেউ যদি তাঁর স্বামী আর ছেলের খোঁজ দিতে পারেন। তাঁরা ওই অভিশপ্ত ট্রেনের তৃতীয় কামরাতে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকেই তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। কিছু দূরে আহত শরনাম্মাকে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন রেলকর্মীরা। কিন্তু তাঁর মুখে খালি একটাই কথা, “চোখ বুজলেই ভেসে উঠছে পোড়া হাত পা-র দৃশ্য। কিছুতেই ভুলতে পারছি না, কী ভাবে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিল প্রথম কামরার যাত্রীরা। কিন্তু কামরাটা এত গরম হয়ে গিয়েছিল, কেউ কিছু করতে পারলেন না।” চতুর্থ কামরার যাত্রী বছর তিরিশের রতনাম্মা জানান, ট্রেনটা এত জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল যে, উপরের আসনে যারা শুয়ে ছিলেন উল্টে নীচে রাখা মালপত্রের উপরে পড়ে গেলেন। আগুন দেখে পাশের কামরা থেকে অনেকেই বাইরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। লাইনের পাথরে ঘাক্কা লেগে এঁদের অনেকেরই হাত পা ভেঙে হাসপাতালে। ক্ষতিগ্রস্ত তৃতীয় কামরাটির অধিকাংশ যাত্রীই পেশায় দিনমজুর ছিলেন। কামরাটি উল্টে যাওয়ায় দ্বিতীয় বা চতুর্থ কামরার অনেক বেশি যাত্রী আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। খোঁজ না পেয়ে পেনুকোন্ডার সরকারি হাসপাতালের মর্গের সামনে ভিড় করেছেন নিখোঁজ যাত্রীদের আত্মীয়রা। মনে মনে একটাই প্রার্থনা, এখানে যেন না থাকেন তাঁদের প্রিয়জনরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.