বিশ্রামে ঘাটতি, খামতি সুরক্ষায়, উদ্বেগেই রেল
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে তলায় তলায় ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে তা বুঝতে পেরেছিলেন খোদ রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানই। গোদের উপর বিষফোঁড়া ত্রুটি মেরামতিতে জোনগুলির গা-ছাড়া মনোভাব। সার্বিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া নিরপত্তা ব্যবস্থাকে ঠিক করতে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল রীতিমতো কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছিলেন প্রতিটি জোনের ম্যানেজারকে। ভাঁড়ারে টান থাকায় জোর দিয়েছিলেন নিরাপত্তা রক্ষার রুটিন কাজগুলির উপর। কিন্তু আজকের দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল, বাস্তবে কতটা বেআব্রু হয়ে পড়েছে রেলের যাত্রী-সুরক্ষা।
রেলের যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিই হোক বা কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের রিপোর্ট রেলের নিরাপত্তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছে সব পক্ষই। মান্ধাতা আমলের পরিকাঠামো, পুরনো সিগন্যাল ব্যবস্থা, রেল লাইনের পুনর্নবীকরণ না হওয়া, সুরক্ষা খাতে যথেষ্ট কর্মীর অভাব এই ধরনের সমস্যাগুলির সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরেই যুঝতে হচ্ছে রেলকে। সমস্যা মেটানোর অন্যতম অন্তরায় সুরক্ষা খাতে যথেষ্ট অর্থের অভাব। কিন্তু গত এক দশক ধরে ভাড়া না বাড়নোর যে জনমোহিনী নীতি রেলমন্ত্রীরা নিয়ে এসেছেন, তাতে রেলের পক্ষে আধুনিকীকরণের রাস্তায় হাঁটা এখন কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত রুটিন কাজগুলি অন্তত নিয়মমাফিক হোক। গত মার্চ ও এপ্রিলে সব জোনের মা্যনেজারদের কাছে এই নির্দেশই পাঠিয়েছিলেন বোর্ড-কর্তা। কিন্তু তার পরেও কর্মীদের কাজে গাফিলতি দেখতে পেয়েছেন তিনি। অভাব প্রশিক্ষণেরও। বিনয় মিত্তল গত ৪ এপ্রিল বিভিন্ন জোনের জিএমদের চিঠি লিখে জানান, গুজরাতের ভুজ স্টেশনে একটি যাত্রিবাহী ট্রেন ভুল করে অন্য লাইনে চলে যায়। ওই ট্রেনের চালক ও গার্ডের প্রশিক্ষণের অভাব ছিল বলে তদন্তে জেনেছে মন্ত্রক। কেন কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চেয়ারম্যান।
চলন্ত ট্রেনে আগুন
১৯৯০ চেন্নাই-হায়দরাবাদ এক্সপ্রেস, চেরলাপল্লি (অন্ধ্র), মৃত ৪০
১৯৯৪ মুম্বই-হাওড়া মেল, লোটাপাহাড় ও চক্রধরপুরের মাঝে, মৃত ২৭
২০০৩ গোল্ডেন টেম্পল মেল, লুধিয়ানা ও লাধোয়াল স্টেশনের মাঝে, মৃত ৩৬
২০১১ হাওড়া-দেরাদুন এক্সপ্রেস, গয়ার কাছে, মৃত ৭
২২ মে, ২০১২ হাম্পি এক্সপ্রেস, পেনুকোন্ডা (অন্ধ্র), মৃত ২৬
আজ দুর্ঘটনায় যান্ত্রিক ত্রুটি না নজরে না এলেও চালকদের একটি পুরানো সমস্যা, বিশ্রামের অভাবকেই ফের সামনে নিয়ে এসেছে। দুর্ঘটনার পিছনে চালকের ঘুমিয়ে পড়াকেই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করেছে রেল মন্ত্রক। প্রশ্ন উঠেছে, আদৌও কী ওই চালক যথেষ্ট বিশ্রাম পেয়েছিলেন? বহু ক্ষেত্রে খাতায়-কলমে চালক বিশ্রাম পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। রেলের কর্মী সংগঠনগুলির কিন্তু দাবি, কাগজে লেখা থাকলেও বাস্তবে কম বিশ্রাম পান চালকরা। তাঁরা যথেষ্ট বিশ্রাম পাচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না বলেও তথ্য এসেছে মন্ত্রকের হাতে। এখন তাই বিশ্রাম সংক্রান্ত নিয়মটি কড়া ভাবে পালনের দিকেও জোর দিতে চাইছে মন্ত্রক। প্রতিটি জোনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরীক্ষা চলার কথা। সেটাও যে বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে না, তারও উল্লেখ ছিল মিত্তলের চিঠিতে। কাজ ফেলে রাখার বিপদ সম্পর্কে ২০ মার্চের চিঠিতে তিনি লেখেন, পূর্ব-মধ্য রেলে ফতুয়া-ইসলামপুর লাইনে লেভেল ক্রসিংয়ের লাগোয়া সিগন্যাল ধরে খারাপ ছিল। সংশ্লিষ্ট সব দফতর তা জানা সত্ত্বেও কেউ তা সারাতে উদ্যোগী হয়নি। ফলে ওই ক্রসিংয়ে বাসের সঙ্গে যাত্রিবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ ঘটে। সময়ে ত্রুটি মেরামতি না হওয়াতেও বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। চিঠি পাওয়ার দশ দিনের মধ্যে নিজেদের জোনের সুরক্ষা সংক্রান্ত কী সমস্যা রয়েছে ও তা দূর করতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট মন্ত্রকে জমা দিতে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান। কিন্তু নিরাপত্তায় খামতি যে তাতে দূর হয়নি, হাম্পি এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা তা ফের চোখে আঙুল দয়ে দেখিয়ে দিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.