দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি ঘিরে যখন নানা জল্পনা, তখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ওই অনুষ্ঠানে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল মুলায়ম সিংহের উপস্থিতি। প্রবীণ এই সমাজবাদী পার্টি নেতা শুধু বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে উপস্থিতই থাকলেন না, মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরকারের আর পাঁচটা শরিক দলের নেতার সঙ্গে ইউপিএ সরকারের রিপোর্ট কার্ডও প্রকাশ করলেন। মধ্যমেয়াদে উপর্যুপরি শরিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে যখন বারবার প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা, তখন মুলায়মকে পাশে নিয়ে আজ এ ভাবেই বড় ধরনের রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
ইউপিএ সরকারে মুলায়ম সিংহের দল সমর্থক হলেও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের গত দুই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়নি। অথচ তৃতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতিই দিনের শেষে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে থাকল। মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন ইউপিএ-র আর এক সমর্থক দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদবও। তাঁদের মঞ্চে আপ্যায়ন করে ডেকে নিয়ে গেলেন পবন বনশল-নারায়ণ স্বামীর মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। রিপোর্ট প্রকাশের সংক্ষিপ্ত পর্বের পর মুলায়ম, লালুকে নিয়ে নৈশভোজের টেবিলে বসলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং সরকারের অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে পাশের টেবিলে বসলেও মুলায়মকে নৈশভোজের টেবিল পর্যন্ত আপ্যায়ন করে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। |
এই মুহূর্তে হিন্দিবলয়ের সবথেকে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলের নেতাকে এ ভাবে আপ্যায়নের নেপথ্যে কংগ্রেসের যে বৃহত্তর রাজনীতি রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যখন আসন্ন। যদিও এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কংগ্রেসের এই আপ্যায়নে দৃশ্যতই আপ্লুত মুলায়ম। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থীকে তিনি সমর্থন করবেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে মুলায়ম বলেন, “একটাই শর্ত, তিনি আমলা হতে পারবেন না।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এ বার তাঁর সামিল হওয়ার প্রশ্ন উঠলেও কৌশলে জবাব এড়িয়ে যান মুলায়ম।
কেন্দ্রে প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের পর এই মুলায়মকে কেন্দ্র করেই ছিল অন্য চিত্র। কেন্দ্রে তখনও শরিক তাঁর দল। কিন্তু বর্ষপূর্তির সেই অনুষ্ঠানে তাঁকে ঠিক মতো আপ্যায়ন করা হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। সে দিন দিল্লিতে কংগ্রেসের বড় বন্ধু ছিলেন বামেরা। বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিদের নিয়ে বসতেন সনিয়া-মনমোহন। রাজনীতিতে কোনও কিছুই যে চিরস্থায়ী নয়, তা আজ আরও একবার প্রমাণিত। কেন্দ্রে এখন বিরোধী দল বামেরা। এবং ক্রমশই সরকারের অতিবড় সহায় হয়ে উঠছেন মুলায়ম। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, কংগ্রেসের এই দৌত্যেই স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ-র প্রার্থীকে জেতাতে কংগ্রেস এখন মুলায়মের ওপর ভরসা করছে। ইউপিএ-র আর এক সমর্থক দল বসপা তথা দলিত নেত্রী মায়াবতী আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, মায়াবতীও রাষ্ট্রপতি ভোটে ইউপিএ প্রার্থীকে সমর্থন জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নৈশভোজের অনুষ্ঠানে সরকারের শরিক দলের শীর্ষ সারির সব নেতাই ছিলেন। অসুস্থতার কারণে ডিএমকে নেতা করুণানিধি না এলেও তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ডিএমকে নেতা টি আর বালু। তৃণমূলের তরফে নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় ও অন্য মন্ত্রী-সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। |