বাঙালির প্রিয় রসগোল্লাকে নিয়েও যে এত গোল হতে পারে, তা জানা ছিল না কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তাদের।
ওই মিষ্টির রস পড়েই নিত্যদিন নোংরা হচ্ছে বিমানবন্দরের মেঝে। আর তা পরিষ্কার করার জন্য বহু লক্ষ টাকার যে পাঁচটি গাড়ি কেনা হয়েছিল, তার চারটিই বিকল। বীতশ্রদ্ধ বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা। তাঁর কথায়, “ওই গাড়ির যন্ত্রাংশ পেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আজ এটা খারাপ হচ্ছে, তো কাল সেটা। এত কথা ভেবেই তো নতুন টার্মিনাল পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি পেশাদার সংস্থাকে।”
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার সময়ে এখনও বাঙালিরা রসগোল্লা নিয়ে যেতে পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, বিমানে হাত-ব্যাগে রসগোল্লা নেওয়া নিষেধ। বছর দুই আগে হিথরো বিমানবন্দরে তরল আকারে বিস্ফোরক পাওয়ার পরে এ নিয়ে এখন প্রবল কড়াকড়ি। বিমানবন্দরে গিয়ে বড় ব্যাগ বিমানের পেটে চালান করে দেওয়ার পরে বহু যাত্রী জানতে পারেন সেই নিষেধের কথা।
বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “বিমানের পেটের ভিতরে বড় ব্যাগে করে রসগোল্লা নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু মিষ্টি কাছছাড়া করতে চান না বহু যাত্রী। তবে নিষেধাজ্ঞা জানার পরে আর রসগোল্লা বড় ব্যাগে পাঠানোর সুযোগ থাকে না।” তাই বিমানবন্দরে বসেই টিন বা প্লাস্টিক খুলে তখনই কয়েকটি রসগোল্লার ‘সদ্ব্যবহার’ করা হয়। তড়িঘড়ি তা খেতে বা ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়ে মেঝেতে রস পড়াটা নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। আর এখানেই সমস্যা। |
বিমানবন্দরের এক সাফাইকর্মী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “এই সমস্যা মূলত চেক-ইন এলাকা এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে হয়। সিআইএসএফ রসগোল্লা নিয়ে ওঠা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জানানো মাত্র সেখানেই যতগুলো সম্ভব রসগোল্লা খেতে শুরু করেন যাত্রীরা। মেঝেতে রস পড়া তো স্বাভাবিক।” সেই রস জুতোর তলায় পড়ে মেঝেতে ছড়ায়। নোংরা-চ্যাটচ্যাটে হয়ে যায় মেঝে। সমস্যা হয় কফি নিয়েও। এক অফিসারের কথায়, “বিমানবন্দরে কফি খেয়ে কাপ চেয়ারের পাশে রেখে উঠে যান বহু যাত্রী। পরের জন বসতে গেলে তাঁর পায়ের ধাক্কায় কাপ উল্টে নোংরা হয় মেঝে।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বছর দুই আগে পাঁচটি আধুনিক সাফাই-গাড়ি কেনেন কর্তৃপক্ষ। সেই গাড়ির তলা থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সাবান-জল পড়ে। তা মেঝেতে পড়ার পরে ঘষে দেওয়ার যন্ত্র এবং পরে তা শুকিয়ে দেওয়ার যন্ত্রও থাকে। এক সাফাইকর্মীর কথায়, “রসগোল্লার রস বা কফি পড়ে মেঝে নোংরা হলে এই মেশিন খুব কার্যকর। দু’বার চালিয়ে দিলেই মেঝে পরিষ্কার হয়ে যায়।”
কিন্তু পাঁচটি গাড়ির মধ্যে চারটিই এখন খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে কলকাতায়। কারণ, আমেরিকার এক সংস্থার কাছ থেকে ওই গাড়ি কেনার সময়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম ভাবেননি যে, যন্ত্রাংশ খারাপ হতে পারে। গাড়ির ব্যাটারি বা ব্যাটারির চার্জার যে বদলাতে হতে পারে, মাথায় ছিল না সে কথাও। এখন তাই এক-একটি যন্ত্রাংশ খারাপ হলে, ফের আনতেই কেটে যাচ্ছে দু’মাস। ব্যাটারির চার্জার পাওয়া যাচ্ছে না।
এক কর্মী জানান, যে গাড়িটি অক্ষত রয়েছে, কিছুক্ষণ চললেই গরম হয়ে যাচ্ছে সেটিও। তাই রসগোল্লার রস এখন বেশ ভোগাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। |