ফের অগ্নিকাণ্ড বেসরকারি বাজারে। এ বার পুড়ে গেল বেলেঘাটার সরকার বাজারের প্রায় ৬০টি দোকান। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার গভীর রাতে আগুন লেগে যায় ওই বাজারের উত্তর দিকের দোকানগুলিতে। মুহূর্তের মধ্যেই ছাই হয়ে যায় বেশ কয়েকটি দোকান। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁদের উৎখাত করতে ‘মালিকপক্ষের মদতেই’ বাজারে আগুন লাগানো হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘুরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।”
ওই বাজারের মালিক সমর নাগের বক্তব্য, “একটি মহল থেকে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে। আমরা দুঃখিত যে, দায়িত্বশীল কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত।” |
গত মার্চে এমনই এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল হাতিবাগান বাজার। একের পর এক বেসরকারি বাজারে আগুন লাগার ঘটনায় ‘অন্তর্ঘাত’-এর সম্ভাবনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ। সরকার বাজারের অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত না হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা বলে পুলিশের অনুমান। স্থানীয় মানুষ জানান, সময়ে দমকল পৌঁছে যাওয়ায় বাজারের বড় একটা অংশ আগুনের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত দু’টোর পরে হঠাৎ আগুন লাগার খবর আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছয় দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন। রাতেই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পাল। তাঁর নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। পরে ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল। ততক্ষণে বাজারের একটা দিক পুড়ে ছাই। দমকল সূত্রের খবর, ওই সারিতে একটি সর্ষের তেল কল, প্লাস্টিক দানা তৈরির কল, বরফ কল, বাইন্ডিং প্রেস, মুরগির দোকান, মুদিখানা-সহ আরও কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।
বছর পঞ্চাশেক ধরে বাজারের এক কোণে একটি ঘরে থাকতেন সপরিবার সাম্প্রতীদেবী। বরফ বেচে সংসার চলে তাঁর। মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ঘরে চাল, ডাল, জামাকাপড় থেকে শুরু করে টাকাপয়সা, এমনকী রেশন কার্ডও পুড়ে ছাই। পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন বৃদ্ধা। বললেন, “ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ তিন-চারটি বোমা ফাটার মতো আওয়াজ। বাইরে বেরিয়ে দেখি, বাজারে আগুন। কিছুই বার করতে পারিনি। চোখের সামনে আমার ঘরটাও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।” বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঝলসে পড়ে আছে সারি সারি মুরগি। তার পাশে স্তূপীকৃত পোড়া সব্জি, ডাল, তেল। রয়েছে একটা দগ্ধ মোটরবাইকও।
সাম্প্রতীদেবীর কথায়, “বছর দুয়েক আগে আমাদের বাজারটি এক বাবু কিনেছিলেন। বাজার ভাল করে গড়ার দিকে তাঁর নজর ছিল না। মাসখানেক তাঁর লোকেরা বাজারের চার কোণে চারটে ছোট আগুন নেভানোর যন্ত্র লাগিয়ে দেন। তখনই মনে হয়েছিল, লোক দেখানো ওই কাজের পিছনে কোনও কারণ আছে।” বাজারের পাশেই বেলেঘাটা মেন রোডের এক ব্যবসায়ী বলেন, “আগুন লাগার পরেই একটা গাড়িতে জনা পাঁচেক লোককে চলে যেতে দেখি।”
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার ঘটনাস্থলে যান। পুরমন্ত্রী বলেন, “বাজারটি বেসরকারি। তাই সরাসরি আমাদের কিছু করার নেই। তবে, ওই বাজারের কাঠামো গড়ে তুলতে পুরসভা সাহায্য করবে।” পাশাপাশি ‘অর্ন্তঘাতের’ অভিযোগ নিয়ে সব রকম তদন্ত হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। দমকলমন্ত্রী জানান, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন দমকল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বহু পুরনো ওই বাজার বেলেঘাটার সরকার পরিবারের ছিল। পরে সেটি রিসিভারের হাত ঘুরে হাইকোর্টে যায়। বাজারটির মালিক সমর নাগ বলেন, “হাইকোর্ট থেকে আমরা এই সম্পত্তি কিনেছি। সম্পত্তির একটি অংশ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই বাজারে বহুতল বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। এ নিয়ে বাজারের দোকানিদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না সংস্থার কর্তৃপক্ষের। বাজারে আগুন লাগানোর পিছনে ওই সংস্থারই হাত আছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।
এ দিন সমরবাবু বলেন, “আগুন লাগার পরে আজ সকালে স্থানীয় থানায় এফআইআর করেছি। ঘটনার বিশদ তদন্তের দাবি জানাই। আমাদের দাবি, ফরেন্সিক তদন্ত করিয়ে আগুন লাগার কারণ বার করা হোক। যদি দেখা যায়, আগুন লাগানো হয়েছে, তবে এর পিছনে যারা রয়েছে, তাদের খুঁজে বার করে শাস্তি দেওয়া হোক।”
এ দিন দুপুরেই অগ্নিদগ্ধ বাজার পরিদর্শন করে ফরেন্সিক দল। পুলিশ জানায়, বাজারের ব্যবসায়ীদের তরফেও মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। চলছে তদন্ত। |