মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে উদ্বোধন করেছিলেন মাসখানেকেরও বেশি হল। কিন্তু এক দিকে প্রচণ্ড গরম, অন্য দিকে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়নি। দুইয়ে মিলিয়ে দুর্গাপুরে ‘আরবান হাট’ আপাতত বন্ধ। বৃষ্টি নামার আগে তা খোলারও বিশেষ সম্ভাবনা নেই।
গত ১৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে এসে হাটের উদ্বোধন করেছিলেন। সে দিন থেকে প্রথম পাক্ষিক মেলা শুরু হয়েছিল। ২৮ এপ্রিল তা শেষ হয়েছে। কিন্তু তার পরে আর নতুন করে মেলা বসেনি। দুর্গাপুরে মাইক্রো অ্যান্ড স্মল স্কেল এন্টারপ্রাইজের ডেপুটি ডিরেক্টর মৌ সেন বলেন, “প্রচণ্ড গরমে ক্রেতারা মেলামুখো না হওয়ায় নতুন করে মেলা শুরু করা হয়নি। আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফের মেলা শুরু হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, বিক্রেতাদের দাবি মেনে কিছু পরিকাঠামোগত কাজকর্ম এই সময়ে সেরে নেওয়া হচ্ছে। |
ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্পীদের পসরা শহুরে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিয়ে সঠিক বিপণনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে দিল্লি হাটের আদলে এই হাট গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিল প্রাক্তন বামফ্রন্ট সরকার। ২০০৯ সালে এ ব্যাপারে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক। দুর্গাপুর ছাড়াও শান্তিনিকেতন, শিলিগুড়ি এবং সল্টলেকে হাট গড়া হবে বলে স্থির হয়। দুর্গাপুরের হাটের নির্মাণকাজ শেষ হয় সবার আগে। বাজেট ছিল প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের হ্যান্ডিক্রাফটস ও হ্যান্ডলুম উভয় বিভাগ ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা করে এবং রাজ্য সরকার ২ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা দেয়। হাট গড়ার জন্য সাড়ে পাঁচ একর জমি ও ১৫ লক্ষ টাকা দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)।
উদ্যোক্তারা জানান, সারা বছরই পাক্ষিক মেলার আয়োজন করার কথা। আশপাশের জেলার শিল্পীরা সেখানে পসরা সাজিয়ে বসবেন। কিন্তু প্রথম দিকে মেলা ঘিরে ক্রেতাদের যে ভিড় হচ্ছিল, দিন-দিন তা স্তিমিত হতে থাকে। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই গরমে অতিষ্ঠ শিল্পাঞ্চলের মানুষ সকাল সকাল কাজ সেরে ঢুকে পড়ছেন ঘরে। মেলায় আসার তেমন লোক নেই। উদ্যোক্তারা জানান, সাধারণত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যে বর্ষা নামে। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁরা এগোচ্ছেন। কিন্তু বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কথা মাথায় তড়িঘড়ি হাট চালু করা হলেও দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতাদের থাকার সুবন্দোবস্ত হয়নি। এঁদের বেশির ভাগই দুঃস্থ। মেলায় এসে ঘর ভাড়া করে থাকার মতো সঙ্গতি তাঁদের নেই। তাঁরা যাতে স্টলেই রাত কাটাতে পারেন, তার জন্য প্রতিটি স্টলে পাখা লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানোও দরকার। মহিলাদের জন্য প্রয়োজন স্নানাগার। সৌন্দর্যায়নের জন্য বাগান পরিস্কারের কাজও জরুরি। এই সব কাজের অনেকটাই ইতিমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে বলে হাট কতৃর্পক্ষের দাবি। মৌদেবী বলেন, “পরের মেলা থেকে শিল্পীরা এই সমস্ত সুবিধা পাবেন।”
কবে মেলা ফের চালু হয়, সেখানে এসে শিল্পীরা কতচা স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন, ব্যবসাই বা কেমন হয় সেটাই দেখার। |