অটোচালকদের সঙ্গে বিবাদের জেরে মঙ্গলবারও বাস বন্ধ রইল চিত্তরঞ্জন-আসানসোল রুটে। বাস মালিক ও কর্মীদের দাবি, লাইসেন্স না থাকা অটো চলাচল নিষিদ্ধ না করা হলে বাস চালানো হবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে আসানসোল মহকুমা প্রশাসন।
রূপনারায়ণপুরের একটি মিনিবাসের কর্মীদের সোমবার সকালে মারধর করার অভিযোগ ওঠে অটো চালকদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে চিত্তরঞ্জন-আসানসোল রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দেন কর্মীরা। অটো চালকদের পাল্টা অভিযোগ, রবিবার সকালে চিত্তরঞ্জন স্টেশন থেকে ফেরার পথে ১ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় বাসকর্মীরা এক অটো চালককে মারধর করেছিলেন। তা থেকেই বিবাদের সূত্রপাত।
সোমবারই বাসের কর্মী ও তাঁদের সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে পুলিশ। পুলিশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, পাঁচ দিনের মধ্যে মহকুমাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকের উপস্থিতিতে সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু বাসকর্মীরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। মঙ্গলবার সকালে বাসকর্মীদের সঙ্গে আরও একপ্রস্থ আলোচনায় বসেন সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ। কিন্তু সেই আলোচনাও ভেস্তে যায়। ফলে বাস চলেনি।
মঙ্গলবার বাসকর্মীদের এই আন্দোলনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মালিকপক্ষও। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় অভিযোগ করেন, চিত্তরঞ্জন, রূপনারয়ণপুর-সহ আশপাশের এলাকায় কয়েকশো অটো চলে। সেগুলির বেশির ভাগেরই আসানসোলে চলাচলের অনুমতি নেই। অটোগুলি পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও পুরুলিয়া জেলায় চলাচলের অনুমোদন প্রাপ্ত।
তা সত্ত্বেও এই এলাকায় তারা যাত্রী পরিবহণ করছে বলে অভিযোগ সুদীপবাবুর। তিনি বলেন, “অটোচালকেরা প্রায়ই গায়ে পড়ে বাসকর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়। মারধরও করে। গত এক বছরে আমাদের কর্মীরা পাঁচ বার অটো চালকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন।” সুদীপবাবুদের দাবি, আসানসোলে যাত্রী পরিবহণের অনুমোদনহীন অটোর চলাচল বন্ধ না হলে তাঁরা বাস চালাবেন না।
বাস না চলায় বিপাকে পড়েছেন চিত্তরঞ্জন-আসানসোল রুটের যাত্রীরা। চিত্তরঞ্জন, রূপনারায়ণপুর, সামডি, মাইথন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বহু মানুষজনের আসানসোলে যাতায়াতের অন্যতম বড় ভরসা এই যাত্রীবাহী বাস। প্রতি দিন প্রায় ৭০টি বাস চলে এই রুটে।
সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অফিসযাত্রী-সহ সাধারণ মানুষ রীতিমতো সমস্যায় পড়েছে। অনেকে চড়া ভাড়ায় অটো, রিক্সা বা ট্যাক্সি চেপে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনই এক অফিসযাত্রী উদয়ভানু দত্ত জানান, মাত্র ১৭ টাকায় বাসে চড়ে রূপনারায়ণপুর থেকে আসানসোল চলে আসা যায়। সেই জায়গায় গত দু’দিনে চার বার অটো পাল্টে আসানসোল পৌঁছতে প্রায় দু’শো টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। এ রকম বিপাকে পড়েছেন কয়েকশো যাত্রী। পুরো বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা।
প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য জানান, সোমবার থেকেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাসকর্মীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় সমাধানের রাস্তা মিলছে না। সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস বলেন, “আলোচনা চলছে। সমাধানের সব রাস্তাই খোলা রাখা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্য মিটে যাবে।”
আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মাও আশ্বাস দেন, দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে সমাধানের রাস্তা বের করার চেষ্টা চলছে। |