তাঁকে ছাড়া নকশাল আন্দোলন দমন করা যেত না বলে মনে করেন অনেকেই।
আবার তাঁর বিরুদ্ধেই উঠেছে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জ্যোতি বসুকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ। নকশাল সন্দেহে হেনস্থার হাত থেকে অমর্ত্য সেনকে বাঁচানোর জন্য তাঁর কাছেই কৃতজ্ঞ ছিলেন অমর্ত্য-জননী অমিতাদেবী। পুত্র নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে অমিতাদেবী সেই মনোভাব তাঁকে লিখে জানিয়েওছিলেন।
তিনি রঞ্জিত গুপ্ত। পুলিশ-ইতিহাসে একাধারে দক্ষ ও বিতর্কিত হিসেবে স্মরণীয় রঞ্জিতবাবু মারা গেলেন শনিবার, ৯২ বছর বয়সে। আজ, সোমবার তাঁর শেষকৃত্য। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমান।
নকশাল দমনে কী ভাবে সফল হয়েছিলেন রঞ্জিতবাবু? কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়
|
রঞ্জিত গুপ্ত |
বলেন, “অন্ধ্রপ্রদেশে সে সময় পুলিশ নকশালদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট তদন্ত চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করত। আর রঞ্জিতবাবু সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। রঞ্জিতবাবুর দেখানো পথ ধরেই পরবর্তী কালে কে পি এস গিলকে দিয়ে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পঞ্জাবে উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন।” তবে নকশালপন্থী এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের উপরে ‘থার্ড ডিগ্রি’ প্রয়োগের অভিযোগও বারবারই উঠেছে রঞ্জিতবাবুর বিরুদ্ধে। যেমন মানবাধিকার সংগঠনগুলি কাঠগড়ায় তুলেছে কে পি এস গিলকেও।
কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার বলেন, “গোয়েন্দা অফিসার রুনু গুহনিয়োগী, সন্তোষ দে, অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আদিত্য কর্মকার ও কমল দাসকে নিয়ে রঞ্জিতবাবু একটি দল তৈরি করেছিলেন। দলের পিছনে থাকতেন তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান দেবী রায়। আর নিজের দফতরে বসে পুরো বিষয়টি পরিচালনা করতেন রঞ্জিতবাবু।”
সিদ্ধার্থশঙ্করের মন্ত্রিসভায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন স্বরাষ্ট্র-প্রতিমন্ত্রী। সুব্রতবাবু বলছেন, “হেনরি কিসিংগারের সঙ্গে ওঁকে তুলনা করতেন মানুদা (সিদ্ধার্থবাবু)।” সুব্রতবাবু জানাচ্ছেন, চারু মজুমদারের গ্রেফতার থেকে বরাহনগর হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলায় রঞ্জিতবাবু দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছিলেন। সুব্রতবাবুর কথায়, “পুলিশ বিভাগে রেশন চালুর নেপথ্যেও ছিলেন রঞ্জিত গুপ্ত। এত ব্যক্তিত্বপূর্ণ ও বর্ণময় পুলিশ-কর্তা বড় একটা দেখা যায়নি।” |