প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব যা-ই বলুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে দরাজ ‘সার্টিফিকেট’ই দিচ্ছেন দলের প্রবীণ নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “রাজ্য সরকার এক বছরে খুব ভাল কাজ করেছে। ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করবে।”
রাজ্য সরকারের শরিক হয়েও প্রথম বছরের সরকারি কাজের ‘কড়া’ মূল্যায়ন করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। মমতার
|
কলকাতায় রবিবার। |
সরকারের প্রথম বছরে তেমন কোনও ‘সাফল্য’ নেই বলে ২৪ ঘণ্টা আগেই দাবি করেছে তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা যখন নিজের সরকারের ‘সাফল্যে’র খতিয়ান সম্বলিত বই প্রকাশ করছেন, প্রায় একই সময়ে তাঁদের তরফে পৃথক রিপোর্ট প্রকাশ করে সরকারের সমালোচনা করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর মত ছিল, ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বছরে নতুন সরকার জঙ্গলমহলে উন্নয়ন ও দার্জিলিঙে ‘শান্তি’ ফেরাতে পেরেছে, ‘সাফল্য’ বলতে এটাই। মমতার সরকারের জমি ও শিল্প নীতি ‘ভুল’ বলে মন্তব্য করে ওই নীতি পুনর্বিবেচনারও দাবি তুলেছিলেন প্রদীপবাবুরা।
কলকাতায় রবিবার আইএসআই-এর কাউন্সিল বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। রাজ্য সরকারের এক বছরের কাজে প্রদেশ নেতৃত্বের সমালোচনা প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রণববাবু বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা কে কী বলেছেন, তার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না! আমার মতে, রাজ্য সরকার এক বছর খুব ভাল কাজ করেছে। ভবিষ্যতে ওরা আরও ভাল কাজ করবে।” প্রণববাবুর এই প্রতিক্রিয়া আপাতদৃষ্টিতে প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে ‘অস্বস্তিকর’ হলেও প্রদীপবাবু কোনও বিতর্কে যেতে চাননি। দলীয় কর্মসূচিতে তিনি এ দিন ছিলেন শিলিগুড়িতে। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “প্রণবদা প্রশংসা করতেই পারেন। উনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কোনও রাজ্য খারাপ চলছে, তা এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং প্রণবদা’র মতো সর্বভারতীয় স্তরের এক নেতা হিসেবে তিনি বলতে পারেন না। সাংবিধানিক দিক থেকেও একটা রাজ্যের কাজ নিয়ে সমালোচনা করায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে প্রণবদা’র পক্ষে অসুবিধা আছে।” তাঁরা যে সমালোচনা বন্ধ করছেন না, তা এ দিন ফের স্পষ্ট করে দিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দিক থেকে সরকারের কাজের সমালোচনা করেছি। করতেই পারি!”
তাঁর সরকারের জোট শরিক কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বের সমালোচনা এবং প্রণববাবুর মতো কেন্দ্রীয় নেতার তরফে তা ‘খণ্ডনে’র বিষয়টি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলতে চাননি। মমতা অবশ্য বরাবরই প্রদেশ কংগ্রেসের থেকে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে পৃথক করে দেখেন এবং দিল্লির মতকেই বেশি ‘গুরুত্ব’ দেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রাজ্যের জন্য আর্থিক সহায়তা আদায়ের প্রশ্নে দিল্লির সঙ্গে মমতার টানাপাড়েনে অন্যতম চরিত্র যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, তাঁর এ দিনের মন্তব্য স্বভাবতই ভিন্ন ‘তাৎপর্য’ পাচ্ছে। |
আবার এ দিনই এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদের বক্তব্যে এক ধরনের ‘মধ্যবর্তী’ সুর ধরা পড়েছে। তিনি প্রণববাবুর মতো প্রশংসা করেননি, প্রদীপবাবুর মতো কড়া সমালোচনাতেও যাননি। নকশালবাড়িতে কংগ্রেসের ব্লক সম্মেলনে শাকিল বলেন, “মঞ্চে উপস্থিত মানস ভুঁইয়া, সুনীল তিরকিদের অভিনন্দন। মন্ত্রিসভায় তাঁরা রয়েছেন। তবে এক বছর সময়ে এত তাড়াতাড়ি ১০০% সাফল্যে পৌঁছনো শক্ত।”
কেন্দ্রের কাছে ঋণের সুদ মকুবের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা তাঁর অধিকারের মধ্যেই পড়ে বলে মনে করছেন শাকিল। তাঁর কথায়, “বাংলার মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।”
কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবির সূত্রেই মমতার সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ফের প্রশ্ন তুলেছেন আর্থিক সঙ্কটে থাকা রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তি উৎসবের খরচ নিয়ে। দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনে এক সভায় বলেন, “বর্ষপূর্তির উৎসবের খরচ ২০ কোটি। মেলার শেষে সেটা ৩০ কোটিতেও দাঁড়াতে পারে। অথচ তৃণমূল সংসদে রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজ চেয়ে হইচই করে!”
কী কাজ করতে হবে, সেটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করে রঘুনাথপুরে সিটুর জেলা সম্মেলনের সমাবেশে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “আমরা সরকারের সমালোচনা করব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উনি বিরোধীদের মতো এখনও আমাদের সমালোচনা করে চলেছেন!” আর সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “ওরা বলছে, শিক্ষায় আমরা নাকি অনিলায়ন ঘটিয়েছিলাম! এখন দেখছি আরাবুলায়ন হচ্ছে!”
|