সন্ধ্যার দিকে ঝড় ওঠার পরে স্বস্তি এলেও, সারাটা দিন কেটেছে যেন বন্ধের পরিবেশে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। এমনিতেই রবিবার বলে রাস্তায় লোক চলাচল কম ছিল। অন্য দিন তাও নিত্যযাত্রীদের যে দেখা মেলে, এই দিন তা-ও ছিল না। তার উপরে বেলা এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বাস বা অন্য গাড়িও রীতিমতো কম। এমনকী, সেই সময়ে সহজে দেখা মিলছে না রিকশারও।
আইপিএলের খেলা এবং তারপরে বেশি রাতে চ্যাম্পিয়ানস লিগ ফাইনালের সরাসরি সম্প্রচার দেখতেই কেটে গিয়েছে শনিবার সন্ধ্যা। তার প্রভাব পড়েছে রবিবার সকালে। এই দিন শহরের ঘুমই ভেঙেছে অনেক দেরি করে। তারপরে কোনও রকমে বাড়ির কাছের বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। কেউই এখন রবিবারে বাড়িতে জমাটি মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজনের দিকে ঝুঁকছেন না। হাল্কা মাছের ঝোল আর সহজপাচ্য খাবারেরই কদর এখন সব থেকে বেশি। আর তারপরে ঘর থেকে বেরোনোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
গরমের সব থেকে বড় প্রভাব পড়েছে বাস অটোর মালিকদের। নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “দিনদিন আমাদের সঙ্কট বাড়ছে। বাসের যাত্রী তো কমেছেই। বাস শ্রমিকেরাও কাজে আসতে চাইছেন না। জোড়াতালি দিয়ে কোনও মতে চালানো হচ্ছে।”
গরমের প্রভাব যেন জনজীবনের সর্বত্র পড়ছে। লোকে রেস্তোরাঁয় খেতে পর্যন্ত যাচ্ছেন না। বড় দামি রেস্তোরাঁ থেকে সামান্য পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানেও বিক্রি কমেছে। চায়ের দোকানের মালিক শক্তি সামন্ত বলেন, “আগে রবিবার পাড়ার মোড়ে আড্ডা বসত। অনেকেই সারা সপ্তাহ কলকাতা যাতায়াত করেন, এই দিনটাই ছিল পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্পো করার দিন। তাই বিক্রিও বেশি হত। এখন দোকান খালি।” তবে ডাব ও ঠান্ডা পানীয়ের বিক্রি বেড়েছে। নবদ্বীপের একটি বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ব্যবসায়ী চঞ্চল সাহা বলেন, “চাহিদা বেড়েছে রেফ্রিজারেটর ও বাতানুকূল যন্ত্রের।” মানুষ কষ্ট করে হলেও ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে বাতানুকূল যন্ত্র কিনছেন।
গরমের চোটে রাতে কাজ করতে শুরু করছে পুরসভা। নবদ্বীপের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানীয় জলের লাইন বসানোর কাজ চলছে রাতেই। পুরসভার জল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মিহির পাল বলেন, “রোদ আর গরমের জন্য দিনে কাজ করলে শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই রাতেই কাজ হচ্ছে।” একই ভাবে পূর্ত দফতরও শহরের রাস্তা সারানোর কাজ করাচ্ছে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত।
গরমের জন্য শহরের দু’টি নাট্য সংস্থা তাদের অনুষ্ঠান স্থগিত করে দিয়েছে। |