জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হল কলকাতার দুই যুবককে। একটি ভুয়ো সংস্থার নাম করে কম সুদে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে তাঁরা এক ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর পরিচয়পত্র ও অন্য নথিপত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের এক জনের বাড়ি কলকাতার বিরাটির নিমতা থানার মন্দিরপাড়ায়। অন্য জন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আবাসনে থাকেন। শুক্রবার দুপুরে তাঁরা জলঙ্গি থানার ভাদুরিয়াপাড়ায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই নথিপত্র সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। এর পরেই লিখিত অভিযোগ পেয়ে জলঙ্গি থানার পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ধৃত দুজন যে সংস্থার কর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন, তদন্তে সেই নামে কোনও সংস্থার খোঁজ মেলেনি। ধৃতরা সব জেনে শুনেই ওই কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। ওই প্রতারণা চক্রের পাণ্ডাদের খোঁজ চলছে। গোটা বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।”
ওই দু’জনকে শনিবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক অলি বিশ্বাস তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বলে সরকারি আইনজীবী বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানান। বীরেশ্বরবাবু বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪১৭, ৫১১ ও ১২০ বি ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।”
পুলিশ জানায়, প্রায় তিন মাস আগে জলঙ্গির ভাদুরিয়াপাড়ার বাসিন্দা পেশায় পাট ব্যবসায়ী মহম্মদ আলাউদ্দিনকেও ৭ শতাংশ সুদে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ দেওয়া হবে বলে বেসরকারি এক সংস্থা টোপ দেয়। ওই ফাঁদে পড়ে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা খোয়া যায় তাঁর। ওই ব্যবসায়ী বলেন, “মাস তিনেক আগে এক মহিলা নিজেকে একটি বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে আমার মোবাইলে ফোন করে ঋণ দিতে আগ্রহী বলে জানান। তখন আমি কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁকে পরে ফোন করতে বলি। তার ২৪ ঘন্টা পরে তিনি ফের ফোন করেন। তখন আমি আমার আগ্রহের কথা জানাই। এর পরে ওই সংস্থারই কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে আর এক ব্যক্তি জলঙ্গিতে এসে আমার কাছ থেকে রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর ও ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কাগজপত্রের প্রতিলিপি নেন। এছাড়াও ওই সংস্থার নামে ৫০ টাকার দু’টি অ্যাকাউন্ট পেয়ি (ক্যানসেল) চেক নিয়ে যায়।”
মহম্মদ আলাউদ্দিনের দাবি, “ওই কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার সাত দিন পরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।” তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আমার অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাঙ্কেরই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামের শাখা থেকে ওই টাকা তোলা হয়েছে।” পরে ওই সংস্থার কর্মীদের ফোন করে আর পাওয়া যায়নি। তার পর থেকে সমস্ত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
গোটা বিষয়টি জানিয়ে জলঙ্গি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দুর্নীতি দমন শাখাও গোটা বিষয়টি তদন্ত করছে। কিন্তু এখনও ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার কোনও হদিস মেলেনি।
এর পরেই অন্য এক পাট ব্যবসায়ী সহদেব ঘোষকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে অন্য একটি সংস্থা। সহদেববাবু তাতে রাজি হলে ওই দুই যুবক তাঁর কাছে যান। সহদেব ঘোষ বলেন, “মহম্মদ আলাউদ্দিনকে যে ভাবে প্রতারণা করা হয়েছিল, আমাকেও সেই ভাবেই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। আলাউদ্দিন নিজেই গোটা ঘটনার সময় আমার পাশে ছিলেন। তিনি ওই দুই যুবকের কাছ থেকে তাঁরা যে সংস্থায় কাজ করেন বলে দাবি করেছেন, তার পরিচয়পত্র দেখতে চান। কিন্তু ওই দুই যুবক সে রকম কোনও পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। এর পরেই বিষয়টি থানায় জানানো হয়। পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।” |