অসম, রাজস্থান থেকে দুই নাবালিকা ফিরল মুর্শিদাবাদে
মুর্শিদাবাদের দুই নাবালিকাকে অসম ও রাজস্থান থেকে উদ্ধার করল জেলা পুলিশ। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ভিন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশের দু’টি দল ওই দুই রাজ্যে যায়। রবিবার ওই দুই কিশোরীকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার তাদের আদালতে হাজির করানো হবে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রঘুনাথগঞ্জ ও নবগ্রাম থানা এলাকার দুই কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভিন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় নারী পাচার চক্রের পাণ্ডারা। খবর পেয়ে অসম ও রাজস্থানে পুলিশের দু’টি দল পাঠান হয়। স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় দুই নাবালিকাকে উদ্ধারের পরেই এদিন মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসা হয়েছে।”
নবগ্রামের কিশোরীকে রাজস্থানের ভরতপুর জেলার বোসাপর থানার ঘাটরি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জের নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে অসমের নওগাঁ জেলার বডুয়া থানা এলাকা থেকে। নবগ্রামের ঘটনায় ওই কিশোরীর প্রতিবেশী দুই মহিলা জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পরেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই দুই মহিলার বাড়ি নবগ্রাম থানা এলাকায় হলেও তারা বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের আগরাতে থাকে। মূলত নারী পাচার চক্রের আড়কাঠি হিসেবে তারা কাজ করে থাকে। তিন বা ছ-মাস অন্তর গ্রামের বাড়িতে আসে এবং উত্তরপ্রদেশ ফিরে যাওয়ার সময়ে গ্রামের কিশোরীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবগ্রামের ওই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়ার নামে করে বছর দুয়েক আগে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যায় তারই প্রতিবেশী এক মহিলা। সেখানে নিয়ে গিয়ে এক ব্যক্তির কাছে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই বাড়িতে ১৫ দিন ছিল। এর পরে সেই ব্যক্তি তাকে রাজস্থানে নিয়ে গিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে আর এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়। ওই কিশোরীর কথায়, “দিনের পর দিন আমার উপরে শারীরিক নির্যাতন চালাত বাড়ির লোকজন। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হত। খেতে দেওয়া হত না। বাড়িতে যোগাযোগ করারও কোনও উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত এক দিন প্রতিবেশী এক জনের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে মাকে গোটা বিষয় খুলে বলি।”
এর পরেই মা বীণাপাণি মার্জিত সরকারি চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন গোটা বিষয়টি জানিয়ে নবগ্রাম থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। সিনি’র সিটি কো-অর্ডিনেটর দেবিকা ঘোষাল বলেন, “নবগ্রামের ওই কিশোরী যখন পাচার হয়, তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। বীণাপানিদেবী ২০১০ সালের শেষের দিকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরেই থানায় নিখোঁজের ডায়েরিও করেন। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় পুলিশ সুপারের সঙ্গে গত ১৩ মে দেখা করি। এর পরেই তিনি উদ্যোগী হয়ে রাজস্থানে পুলিশ দল পাঠান।” পুলিশের ওই দলে বীণাপাণিদেবীও ছিলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, “নাবালিকা উদ্ধারে জোড়া সাফল্য মিলেছে ঠিকই। কিন্তু আত্মতৃপ্তির কোনও জায়গা নেই। গ্রামের গরিব বাড়ির মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ফুঁসলিয়ে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সচেতন করতে হবে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পাচার চক্রের এই আড়কাঠিদের রুখতে না পারলে নারী পাচার বন্ধ হবে না।” প্রসঙ্গত, মুম্বাইয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে ডোমকলের এক কিশোরী ও লালবাগের এক মহিলাকে লালবাগের একটি হোটেলে নিয়ে এসে রাখে পাচার চক্রের পাণ্ডারা। গত ৯ মে মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ ওই হোটেলে হানা দিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং এক মহিলা-সহ তিন জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃতদের কাছ থেকে নারী পাচারের অনেক তথ্য মিলেছে। ধৃত পাচারকারী মহিলাকে জেরা করেই ঘুনাথগঞ্জের ওই কিশোরীর কথা জানতে পারে পুলিশ। সেই মতো পুলিশ দল পাঠিয়ে অসম থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.