হাঁটাপথে পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগে। বাসে গেলে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট।
বাংলা দল যে হোটেলে রয়েছে, সেখান থেকে কটক রেল স্টেশন পৌঁছতে তাড়াহুড়ো করার প্রযোজন পড়বে না। কেননা রবিবার বারাবাটি স্টেডিয়ামে কেরলের সঙ্গে ড্র করে সন্তোষ-বিদায়ের সঙ্গেই বাংলার কটক-যাত্রার সময়সীমাও ফুরিয়ে এল। কর্তব্যটুকু বলতে শুধু দু’দিনের নিরামিষ অপেক্ষা। উপায় নেই, পঞ্জাবের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার একটা নিয়ম রক্ষার ম্যাচ তো খেলতেই হবে।
মাঠে নামার আগেই বাংলার সন্তোষ অভিযান কার্যত শেষ করে দেয় মহারাষ্ট্র। পঞ্জাবকে ৫-০ হারিয়ে। যেটুকু আশার আলো দেখা যাচ্ছিল, অসহ্য আর ঘুমপাড়ানি ফুটবল খেলে সেটাও জলাঞ্জলি দিয়ে দিলেন তারিফ-মিঠুনরা। এখন সমস্যা হল কপালের দোহাই যে দেবেন, সেটাও দিতে পারবেন না সাব্বির আলি। কেন না গোটা ম্যাচে একটা পেনাল্টি এবং ভুরি ভুরি গোল নষ্ট করল কেরল। সেখানে ভাগ্য বিশ্বাসঘাতকতা না করলে, তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ত কেরলই। ম্যাচ শেষে সাব্বির বললেন, “আমরা কোনও বিভাগেই ভাল খেলতে পারিনি। সব দায় আমার।”
বাংলা সুযোগ পায়নি, তা নয়। দিনের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল তারাই। কেরল ডিফেন্সকে দাঁড় করিয়ে রেখে তারিফ আর মিঠুন শুধু জোসেফকে (কেরল গোলকিপার) পেয়ে গিয়েছিল। গড়িমসি করতে গিয়ে তারিফ বলটা তুলে দেন কেরল গোলকিপারের হাতে। মিনিট দশেকের মাথায় এই খোঁচাটা খেয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকে কেরল। উসমানের ফ্রি কিক পোস্টে লেগে ফিরে আসার একটু পরেই পঁচিশ গজ দূর থেকে কান্ননের শট বারে লেগে ফিরল। বাকি আশি মিনিট দাপিয়ে বেড়াল কেরলই। আর বাংলা পুরোটাই অন্ধকারে। একটা ভাল পাস নেই। একটা ভাল শট নেই। কোনও রকমে এর পা থেকে ওর পায়ে বল এবং কেরলের পায়ে জমা।
সন্তোষে বাংলার ব্যর্থতার কারণ একটা নয়, অনেক। কটকে দু’টো ম্যাচ খেলে ফেললেও বাংলা এখনও টিম হয়ে উঠতে পারেনি। দলে তরুণ ফুটবলার প্রচুর। কিন্তু খেলায় কোনও তারুণ্যের জেদ নেই। কাজে দিল না তপন-জামিলদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। যে কোনও কারণেই হোক, তপন প্রথম থেকেই একটু গুটিয়ে ছিলেন। সেন্টার, ফ্রি-কিকগুলো ঠিকঠাক হচ্ছিল না। পরিশ্রম দিয়ে জামিল যাও বা একটু দলকে তাতানোর চেষ্টা করলেন, তাতে লাভ হল না।
বাংলার ডিফেন্সের যা অবস্থা তাতে সন্তোষে ভাল কিছুর আশা শুরু থেকেই ছিল না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সাগ্রাম মান্ডির। দলে অভিজ্ঞ ফুটবলার বলে তাঁকে নিশ্চয়ই নামানো হচ্ছে। কিন্তু কোথায় গেল তাঁর ট্যাকল, অ্যান্টিসিপেশন, হেড কিংবা পজিশন সেন্স? সাগ্রামকে কভার করতে গিয়ে গুরপ্রীত হিমশিম খেলেন এবং অনেক সময় ব্যর্থ হলেন। কেরলের সঙ্গে ড্র করে একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়লেন সাব্বির। প্রশ্ন উঠছে তাঁর দল নির্বাচন নিয়ে। যদিও সাব্বিরের যুক্তি, “গত দু’বার তো আমার নির্বাচিত দলই চ্যাম্পিয়ন করেছিল বাংলাকে।” এখন শুধু দেখার, পঞ্জাবকে হারিয়ে সম্মান রক্ষা করতে পারে কি না বাংলা। নইলে না জেতার কলঙ্ক নিয়েই কলকাতা ফিরতে হবে গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নকে। |