|
|
|
|
ডিওয়াইএফের জোনাল সম্মেলন এ বার ‘গোপনে’ |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
পরিস্থিতি এখনও ‘প্রতিকূল’। তাই পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের বেশ কিছু জোনাল সম্মেলন হবে ‘গোপনে’। ঠিক যে ভাবে সিপিএমের একাধিক জোনাল কমিটির সম্মেলন ‘গোপনে’ হয়েছিল মেদিনীপুরে।
জেলায় ডিওয়াইএফের ইউনিট কমিটিগুলির সম্মেলন শেষ হয়েছে। ১৫ মে থেকে শুরু হয়েছে লোকাল কমিটি-স্তরের সম্মেলন। সাংগঠনিক সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি ইউনিট কমিটির সম্মেলন এ বার ‘খাতায়-কলমেই’ সারতে হয়েছে। লোকাল কমিটি-স্তরেও অনেক জায়গাতেই একই রকম পরিস্থিতির সম্ভাবনা। জুনে হবে জোনাল কমিটি-স্তরের সম্মেলন। তার পর জুলাইয়ের শেষে কিংবা অগস্টের শুরুতে জেলা-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। লালগড়, গড়বেতা, কেশপুরের মতো এলাকায় যে সম্মেলন করার পরিস্থিতি নেই, তা মানছেন যুব-নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, ‘সর্বাত্মক আক্রমণ’ এবং ‘চক্রান্ত’ চলছে। তাই ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ একটু সময় লাগবে। এই সব এলাকার সম্মেলন কি তা হলে ‘গোপনেই’ হবে? ডিওয়াইএফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কমল পলমল বলেন, “অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কিছু বলব না। তবে কিছু ক্ষেত্রে কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়। কর্মসূচি সফল করতে এই অবস্থান নেওয়া জরুরি। এ বার কিছু ক্ষেত্রে তেমনই হবে।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “আগের থেকে পরিস্থিতি পাল্টেছে। যুব-সমাজের মধ্যেও ক্ষোভ-যন্ত্রণা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ফলে গ্রামে-গ্রামে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এক বছর আগেও সিপিএমের ‘দুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। তবে রাজ্যে পালাবদলের পর সেই তকমা মুছে গিয়েছে। ডেবরা থেকে গোপীবল্লভপুর, গোয়ালতোড় থেকে কেশিয়াড়ি--সর্বত্রই তৃণমূলের প্রভাব বেড়েছে। পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ হওয়ায় এ বার কেশপুর, গড়বেতা, শালবনি, গোয়ালতোড়, লালগড়ের মতো এলাকায় সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্মেলন ‘গোপনে’ মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলায় এর আগে সিপিএমকে কখনওই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। ডিওয়াইএফআইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ইউনিট সম্মেলন-পর্বেই জেলা নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন, সর্বত্র সম্মেলন করা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের উপর আক্রমণ আরও তীব্র হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ডিওয়াইএফআইয়ের সদস্য-সংখ্যা এখন প্রায় ৩ লক্ষ। ইউনিট কমিটি রয়েছে ৩ হাজার ১৬৫টি। লোকাল কমিটি ১৮৩টি। এবং জোনাল কমিটি ৩২টি। লোকাল কমিটির সংখ্যা একই থাকলেও এ বার ইউনিট কমিটির সংখ্যা কমে ২ হাজার ৮৯৪টি হতে পারে। অর্থাৎ ২৭১টি কমার সম্ভাবনা। জোনাল কমিটির সংখ্যা বেড়ে ৩৩টি হবে। এ ক্ষেত্রে মেদিনীপুর সদর জোনাল কমিটি ভেঙে সদর পূর্ব ও সদর পশ্চিম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী ৯ জুন থেকে জেলায় সদস্য-সংগ্রহ অভিযানে নামবে ডিওয়াইএফ। তবে এখনও পর্যন্ত সদস্য-সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি। জেলা সম্পাদক জানিয়েছেন, জুনে সদস্য-সংগ্রহ শুরু হবে। তার আগেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হবে। তাঁর দাবি, “এ বার সদস্য-সংখ্যা আরও বাড়বে।” যুব-সংগঠনের এক জেলা নেতা বলেন, “পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, কেশপুর-গড়বেতার মতো বেশ কয়েকটি এলাকায় সদস্য-সংখ্যা হ্রাস পাবে। তবে সাঁকরাইলের মতো জঙ্গলমহলের এলাকায় সদস্য-সংখ্যা বাড়বে।” তাঁর কথায়, “জেলায় সংগঠন সম্প্রসারণের মধ্যেই আছে। তবে সম্প্রসারণে অসমতা থেকে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে উদ্যোগহীনতাও কাজ করেছে।” যুব-সংগঠনে এখন সর্বক্ষণের কর্মী রয়েছেন ২৯ জন। ২০১০ সালে ছিলেন ৩৪ জন। এ বারও সংখ্যাটা বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতেও দ্রুত ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ সম্ভব বলে মনে করছে ডিওয়াইএফআই। জেলা সম্পাদক বলেন, “বেকারি বাড়ছে। শিল্পায়ন হচ্ছে না। কাজ নেই। কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেকার যুবক-যুবতীরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন।”
জেলা সম্পাদকের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, কাজ না-পেয়ে বেকারদের মধ্যে যে কর্মহীনতা, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ‘ফসল’ তোলার চেষ্টা করছেন সিপিএমের যুব-নেতৃত্ব। ৩৪ বছর ধরে নিজেরাই সরকারে থাকায় যে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে এত দিন তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি সিপিএমের যুব সংগঠন। |
|
|
|
|
|