কাঁঠাল খাওয়ার টানে রেললাইন লাগোয়া গ্রামে ঢোকার সময় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল একটি হাতির। রবিবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ও পিয়ারডোবা স্টেশনের মাঝে, নামোধবনি গ্রামে পুরুলিয়া থেকে হাওড়াগামী রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় প্রাণ হারায় ওই দাঁতাল।
গ্রামবাসীরা জানান, কাঁঠালের টানে গত কয়েকদিন ধরে ৭টি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি জড়ো হয়েছে রেল লাইনের পাশের ধবনীর জঙ্গলে। সেই দলেরই একটি দাঁতাল এ দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের সামনে পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সাত্তার মণ্ডল, মোর্তাজা মণ্ডলরা বলেন, “ট্রেনটি হাতিটিকে প্রায় ৭০ ফুট দূর পর্যন্ত ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। এর পরেই হাতিটি এক পাশে ছিটকে পড়ে।” বাঁকাদহের রেঞ্জ অফিসার বলাই ঘোষ বলেন, “প্রায় ৩৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক দাঁতাল। পিছনের দু’টি পা টানা ঘষটানিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় দাঁতালটির মৃত্যু হয়েছে।”
|
নামোধবনি গ্রামে মৃত দাঁতাল। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “হাতিটি হঠাৎই রেললাইনের উপরে চলে আসায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পিয়ারডোবায় ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনটিকে বদলে অন্য ইঞ্জিন লাগিয়ে ট্রেনটি হাওড়ার দিকে রওনা দেয়।” দুর্ঘটনার জেরে ওই শাখায় ট্রেন চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়। গ্রামবাসীরা জানান, ২০০৪ সালে এই এলাকারই ভালুকা গ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। কয়েকবছর আগে ওই এলাকাতেই ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয় একটি দাঁতাল। তাঁদের ক্ষোভ, “আমরা তখন থেকেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর আর্জি জানিয়েছিলাম। রেল তা মানেনি। তা ছাড়া, ফি বছর এই সময় কাঁঠালের লোভে হাতিরা রেললাইন লাগোয়া গ্রামগুলিতে ঢোকে। তাই বন দফতরেরও উচিত ছিল রেলকে আগাম সতর্ক করা।” ডিএফও (বিষ্ণুপুর) বিদ্যুৎ সরকারের দাবি, “এই এলাকাটি হাতিদের করিডর। আগের দু’টি দুর্ঘটনার পরেই আমরা রেলকে এখানে সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা না মানায় ফের দুর্ঘটনা ঘটল।” যদিও ডিআরএমের পাল্টা দাবি, “বছরের এই সময়টা যে হাতিরা রেললাইন লাগোয়া এলাকায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করে, বন দফতর সে ব্যাপারে আমাদের আগাম জানালে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া হত।” |