আগরতলাকে কাঁদিয়ে ফিরে গেল হেলেন
র দুষ্টুমি করবি না। এ দিক ও দিক যাবি না। লক্ষ্মী হয়ে থাকবি। এ বার যা। তোর মালিক এসেছে, তিন বন্ধু এসেছে। নিজের লোক ভর্তি। যা বেটি নিজের ঘরে যা। আমরা তো আর.কেউ নই তোর। শুধু যদি...
কথাটা শেষ করতে পারলেন না আবুল হারেস। গলাটা কেঁপে গেল। সঙ্গী কৃষ্ণ শীল এসে হাতটা ধরলেন হারেসের। “এমন করিস না হারেস। ও অবোলা। তা বলে মনে কি আর কষ্ট পাচ্ছে না। আমরা যা করেছি, তা তো ছিল ডিউটি। ডিউটি শেষ। আমাদের দায়ও...।” সঙ্গীকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এ বার কৃষ্ণের চোখেও জল।
আখাউড়া সীমান্ত। সবুজ গাছে ছাওয়া চেকপোস্ট পেরিয়ে হেলেদুলে ফিরে গেল হেলেন। শনিবার। তার সঙ্গী পুরনো তিন বন্ধু নয়নতারা, মৌসুমি এবং রাজবাহাদুর। ছোট রাজবাহাদুর তো হেলেনের পেটে বারবার মাথা ঘষছিল। ভাবখানা, ‘এতদিন আমাদের ভুলে ছিলে কী করে?’ হাঁটতে হাঁটতে একবার কি পিছনে তাকাল হেলেন? ট্রয় নয়, বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে সীমান্ত টপকে পয়লা বৈশাখের আগের রাতে চুপিসাড়ে আগরতলায় ঢুকে পড়া ‘অনুপ্রবেশকারী’। আখাউড়া সীমান্ত দিয়েই শনিবার সে ‘দেশে’ ফেরত গেল একমাসেরও বেশি আগরতলা-সিপাহিজলার আতিথ্যের বন্ধন কাটিয়ে।
মালিক হাজি মহম্মদ আব্দুল সামাদের সঙ্গে হেলেনবালা।
আখাউড়া সীমান্তে। ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী
হেলেন হল সেই বিদেশি হস্তিনী, যাকে নিয়ে এক মাসেরও বেশি ঘোল খেয়েছে আগরতলার পুলিশ, বনরক্ষী এবং সাধারণ মানুষ। কিন্তু নাস্তানাবুদ করা এই ‘অনুপ্রবেশকারিণী’ কখন যে ভালবাসার মায়াডোরে বেঁধে ফেলেছে আগরতলাবাসীকে বোঝা গেল শনিবার তাকে বিদায় দেওয়ার বেলায়। বনকর্মী থেকে পুলিশ, সীমান্তরক্ষী, সাধারণ মানুষ সকলেই করুণ চোখে তাকিয়ে রইলেন তার প্রস্থানপথের দিকে।
পালানো হস্তিনীটি যে কারও পোষা, তার আচরণে গোড়া থেকেই অনুমান করেছিলেন এ পারের বনকর্তারা। সে গর্ভিণী, এ কথা জানার পর তাঁদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। ‘অনুপ্রবেশকারী’ পেতে থাকে বিশেষ অতিথির আদর। চলতে থাকে তার চিকিৎসা আর সন্ধান চলতে থাকে তার মালিকের। অবশেষে জানা যায়, পলাতকা আসলে বাংলাদেশের দ্য নিউ স্টার সার্কাসের হাতি। হাতির মালিক হাজি মহম্মদ আব্দুল সামাদ জানান, পয়লা বৈশাখের মিছিলের জন্য হেলেনবালাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেখান থেকে পালিয়ে আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে সে ভারতে ঢুকে পড়ে ।
এর পর পালিয়ে আসা এই হস্তিনী ত্রিপুরার বনকর্মীদের মাইলের পর মাইল দৌড় করিয়েছে। কখনও কিল্লার, কখনও আঠারভলা, কখনও মহারানি জঙ্গলে, কখনও করবুকের চেলাগাং এলাকার বাঁশবাগানে। বনকর্মীদের ভয় ছিল জংলি হাতিরা না হেলেনকে মেরে ফেলে। কারণ হেলেন সন্তানসম্ভবা। দক্ষিণের বিভিন্ন জঙ্গলে তার সন্ধানে সপ্তাহ ভর চরকি খেয়েছেন বনকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত ‘বন্দি’ করে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় অমরপুরের থাকছাড়ায়। পরে গোমতী জেলার বন দফতরের আস্তানায়। তারপর সিপাহিজলার অভয়ারণ্যে। সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এত দিন আগরতলায় হেলেনকে দেখাশোনা করছিলেন আবুল হারেস এবং কৃষ্ণ শীল। বাড়ি অমরপুরে। আবুল বলেন, “এক মাসের বেশি ওকে নিয়েই পড়েছিলাম। বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছে।”
বাংলাদেশে হেলেনের দেখাশোনা করতেন মাহুত বদুই মিয়াঁ। হেলেনকে ফিরে পেয়ে খুশি তিনিও। দশ বছর ধরে হেলেনকে দেখাশোনা করা বদুই এ দিন আশ্বাস দিলেন আবুল ও হারেসকে “যত্নের কোনও অভাব হবে না।”
“জানি। কিন্তু আমাদের কি আর মনে থাকবে ওর?” বিদায়বেলায় বড় করুণ শোনাল আবুলের কথাটা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.