রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে খাল সংস্কার করে তোলা হচ্ছে মাটি
মুম্বই রোডের সম্প্রসারণ খুলে দিল মজে যাওয়া খালের ভাগ্য!
হাওড়ার বাগনানে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আন্টিলা খাল দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সংস্কার হয়নি। খালটি সংস্কার হলে বাগনানের নিকাশি সমস্যার সমাধান হত। কয়েক হাজার চাষিও উপকৃত হতেন। কিন্তু টাকার অভাবে এত দিন সেচ দফতর কাজটি করতে পারেনি। মুম্বই রোড সম্প্রসারণ সমস্যাটির সমাধান করেছে। সম্প্রসারণের কাজে লাগবে প্রচুর মাটি। সেই মাটিই তোলা হবে এই খাল থেকে। তাতে খালটির সংস্কারও হয়ে যাবে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর পাবে মাটির ‘রয়্যালটি’ বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা।
কুলিতাপাড়া লকগেটের কাছে দামোদর থেকে শুরু হয়ে খালটি মিশেছে চরকাঁটাপুকুরের কাছে রূপনারায়ণে। এক সময়ে এই খালের জলে নৌকা চলত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বর্ষাকালে বাগনান শহরের নিকাশি ব্যবস্থা হত এই খালের মাধ্যমে। অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমিতে চাষ হত এই খালের জলে। আন্টিলা, চন্দ্রভাগ এবং বাঁটুল বৈদ্যনাথপুর— এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা উপকৃত হতেন। খালটি মজে যাওয়ায় সব বন্ধ হয়ে যায়। এখন মূল খালটি মাত্র ফুট দশেক চওড়া।
স্থানীয় বাসিন্দারা বহু বার এই খাল সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছেন। টাকা না-থাকায় এই কাজ করতে পারেনি সেচ দফতর। দফতর সূত্রের খবর, খালটি ঠিক মতো সংস্কার করতে লাগবে প্রায় সওয়া ২ কোটি টাকা। সম্প্রতি মুম্বই রোড সম্প্রসারণ হচ্ছে। এই কাজে প্রয়োজন প্রচুর মাটি। যে ঠিকাদার সংস্থা কোলাঘাট থেকে বাগনান পর্যন্ত মাটি ফেলার দায়িত্ব পেয়েছে, তার কর্তারা মাটির খোঁজে এসে খালটির সন্ধান পান। ঠিকাদার সংস্থার অন্যতম কর্তা অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের জানান, বহু বার তাঁরা সেচ দফতরের কাছে দরবার করার পরেও খালটি সংস্কার হয়নি। তাঁরাই আমাদের কাছে দাবি করেন, আমরা যদি
ছবি: হিলটন ঘোষ।
মাটি তুলি, তা হলে এলাকার চাষিরা উপকৃত হতে পারেন। পরিকল্পনাটি আমাদের মনে ধরে। আমরা বিভিন্ন মহলে এই খাল থেকে মাটি তোলার প্রস্তাব দিই।”
ঠিকাদার সংস্থার কর্তারা প্রথমে যান বাগনান ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে। সমিতির উদ্যোগে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয়। হাজির ছিলেন বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক অরুণাভ (রাজা) সেন। বৈঠকে ঠিক হয়, এ ব্যাপারে সেচ দফতরের অনুমতি এবং পরামর্শ নেওয়া হবে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অলোক গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণাভ সেন এবং উলুবেড়িয়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান আহমেদের প্রতিনিধি সহদেব মাজি বলেন, “ঠিকা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সেচ দফতরে যাই। আমাদের প্রস্তাবের উপরে ভিত্তি করে সেচ দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর যৌথ ভাবে খালটি পরিদর্শন করে। তার পরে ওই ঠিকাদার সংস্থাকে খাল থেকে মাটি তোলার অনুমতি দেন। একই সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে রয়্যালটি জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন তাঁরা।” সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা সূত্রের খবর, খাল থেকে মোট ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ঘনমিটার মাটি তুলবে তারা। এ জন্য প্রথম কিস্তির ‘রয়্যালটি’র টাকাও জমা দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেই শুরু হয়েছে মাটি তোলার কাজ।
সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “টাকার অভাবে খালটির সংস্কার আমরা করতে পারছিলাম না। মুম্বই রোড সম্প্রসারণের কাজে মাটির প্রয়োজন হওয়ায় আমরা খালটি কাটার অনুমতি দিই। এতে আমাদের রথ দেখা ও কলা বেচা দুই-ই হয়ে যাচ্ছে। আমাদের একটি পয়সাও খরচ হচ্ছে না। অথচ খালটি সংস্কার হয়ে যাচ্ছে। আমরা ঠিকাদার সংস্থাকে বলেছি, অন্যান্য মজে যাওয়া খাল থেকেও একই ভাবে তারা মাটি তুলতে পারে।” সুমন্ত্রবাবু জানান, মাটি তোলা হচ্ছে তাঁদের দফতরের নির্দেশিকা মেনে। মাটি তোলার পরে খালটি চওড়ায় দাঁড়াবে ১০০ ফুট। এর গভীরতা হবে ১৫ ফুট।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, “খালটি সংস্কার হওয়ার পরে ১০ হাজার বিঘা জমিতে সেচের ব্যবস্থা হবে। তৈরি হবে স্থায়ী নিকাশি ব্যবস্থা। খাল সংস্কার হয়ে গেলে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হবে। ফলে ভূগর্ভস্থ জল তোলার দরকার হবে না। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।” খালটি মজে যাওয়ায় বহু জায়গায় জবরদখলকারী বসে পড়েছিলেন। কিন্তু মাটি তোলার কাজ শুরু হওয়ার আগে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে তাঁদের উঠে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দাবি, খাল সংস্কারের গুরুত্ব বুঝে সকলেই স্বেচ্ছায় উঠে গিয়েছেন।
সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় মানুষ ও এলাকার কৃষিজীবীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.