রিচার্ড লোইতামের মৃত্যু সংক্রান্ত ফরেন্সিক রিপোর্টের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘কমিটি অন জাস্টিস ফর রিচার্ড’ (সিজেএফআর)। সেই সঙ্গে নতুন করে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে। মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর-পূর্বের জন্য গোটা দেশে বিশেষ হেল্পলাইন এবং উত্তর-পূর্ব ও মূল ভূখণ্ডের বিভেদ কাটাতে বিশেষ সংহতি কমিটি গড়ার প্রস্তাবও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যের বিষবাষ্প এতটাই জমাট বেঁধেছে, উত্তর-পূর্বের ছাত্র সংগঠনগুলির একাংশ জাতীয় সঙ্গীত নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। বৈষম্যের প্রতিবাদে নিষ্ক্রিয় থাকায় রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির দফতরেও হানা দেয় ছাত্ররা।
গত ১৭ মে বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মণিপুরি ছাত্র রিচার্ড লোইতামের মৃত্যু সংক্রান্ত যে ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা দেয় সেখানে বলা হয়, রিচার্ডের দেহে অন্য আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হৃদযন্ত্র বিকল হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রিচার্ডের পুরনো হৃদরোগ থাকার সম্ভাবনার কথাও রিপোর্টে রয়েছে। কিন্তু রিচার্ডের বাবা ও মা দু’জনেই চিকিৎসক। মা বিদ্যাবালি লোইতাম মৃত্যুর কারণ ও ছেলের পুরনো হৃদরোগ থাকার কথা মানতে নারাজ। রিপোর্টে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া বা নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বের হওয়ার সঠিক কারণ সম্পর্কেও নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। এ অবস্থায় মণিপুরের ছ’টি ছাত্র সংগঠন যৌথ মঞ্চ গড়ে ফরেন্সিক রিপোর্টের প্রতিবাদে নেমেছে।
বেঙ্গালুরু পুলিশ রিচার্ডের মৃত্যুর ঘটনাটিকে ‘ক্লোজ্ড কেস’ বলে ফাইল বন্ধ করতে তৈরি। কিন্তু সিজেএফআর ও সারা মণিপুর ছাত্র সংগঠন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। গত কাল ও আজ রাজ্যের নানা স্থানে পি চিদম্বরম, মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। রিচার্ডের পাশাপাশি, গত বছর ওক্রাম লাবার মৃত্যুর তদন্তভারও সিবিআইকে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্টের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে পোস্টার, ব্যানার ঝুলছে। বলা হচ্ছে, ‘বানানো রিপোর্ট বৈষম্যের উদাহরণ’, ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে মণিপুরবাসীকে প্রতারণা করছে মূল ভূখণ্ড’।
শিলংয়ের মণিপুরি ছাত্র সংস্থাও ডানা সাংমা ও রিচার্ডের মৃত্যুর ন্যায় বিচার চেয়ে প্রতিবাদে নেমেছে। তারা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। বেঙ্গালুরু টাউন হলে রবিবার বিকালে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সিজেএফআর। তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার আবেদনও জানায়।
এ দিকে, মিজোরাম সরকারের তরফে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব চিদম্বরমকে লিখিত প্রস্তাব দিয়ে সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি বাকি দেশের মানুষের প্রতি উত্তর-পূর্বের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ সংহতি কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেন। বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্বের সর্বস্তরের প্রতিনিধি ও দেশের বিদগ্ধজন, রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াজগতের ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গড়া হোক। কমিটি দু’পক্ষের ক্ষোভ, অভিযোগ ও অভাবগুলি খতিয়ে দেখে সেতুবন্ধনের ব্যবস্থা নেবে। গোটা দেশে উত্তর-পূর্বের মানুষদের জন্য বিশেষ ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন গড়া, পুলিশি নিরপত্তা এবং আইনি সাহায্য নিশ্চিত করার প্রস্তাবও মিজোরামের তরফে দেওয়া হয়েছে।
‘জাস্টিস ফর লোইতাম রিচার্ড’-এর পক্ষ থেকে চিদম্বরমকে যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে সেখানেও, উত্তর-পূর্বের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন ও পুলিশ সেল, বিশেষ আইনি সেল, গোটা দেশে উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সস্তা ও নিরাপদ অতিথিশালা গড়া ও মূল ভূখণ্ডের স্কুল, কলেজ, ক্লাব ও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের নিয়মিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
সেই সঙ্গে, উত্তর-পূর্বের উপরে ‘জোর করে চাপিয়ে দেওয়া’ জাতীয় সঙ্গীতে উত্তর-পূর্বের নামোল্লেখ না থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে, বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিও তোলা হয়েছে।
রিচার্ডের ঘটনা ও মণিপুরি ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ানোয়, রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির পতাকা, পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ছাত্ররা। বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের দফতরে হানা দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রবেশপথ। গ্রেফতার হন ১৭ জন ছাত্র নেতা। পরিস্থিতি সামলাতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম ঘোষণা করেছেন, রিচার্ডের বিষয়ে ন্যায়বিচার আদায় করতে কর্নাটক সরকারের উপরে জোর দেওয়া হবে। |