আরও ঘোরালো হচ্ছে কেরল সিপিএমের সঙ্কট! দলের রাজ্য নেতৃত্বকে ঢেলে সাজার দাবি জানিয়ে এ বার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের দ্বারস্থ হয়েছেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর বিবাদের জেরে কেরলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তিনি আর বিরোধী দলনেতার পদে থাকতে চান না বলেও কারাটকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ভি এস। ঘটনাপ্রবাহে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বে। অবিলম্বে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে হস্তক্ষেপ না-হলে কেরলের পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছে পলিটব্যুরোর একাংশ। আগামী ৯-১০ জুন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কেরল-কাণ্ড মোকাবিলাই এখন পলিটব্যুরোর কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোঝিকোড়ে প্রাক্তন সিপিএম নেতা টি পি চন্দ্রশেখরনের খুন হওয়ার ঘটনাকে ঘিরেই কেরল সিপিএমে ভি এস এবং বিজয়ন শিবিরের লড়াই ফের তুঙ্গে উঠতে শুরু করেছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। টি পি-র মতো নেতাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিহিত করেছিলেন বিজয়ন এবং তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভি এস পাল্টা বলেছিলেন, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির এস এ ডাঙ্গের মতো ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ হয়ে উঠছেন বিজয়ন! এরই মধ্যে টি পি-হত্যায় সিপিএমের দুই স্থানীয় নেতা গ্রেফতার হওয়ায় দলের ‘বিড়ম্বনা’ আরও বেড়েছে। সিপিএম ছেড়ে নতুন দল আরএমপি গড়ে-তোলা নেতাকে খুন করার ছক বিজয়নেরাই করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহত নেতার স্ত্রী। এই গোটা ঘটনার জেরেই রাজ্য নেতৃত্বকে ঢেলে সাজার দাবি জানিয়ে কারাটকে ভি এস চিঠি দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। পদত্যাগ করতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা হিসাবেও। এর আগে জমি কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোয় একই ভাবে পলিটব্যুরোকে চিঠি দিয়ে পদ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন অশীতিপর ভি এস। তাঁর সেই আর্জি তখন মঞ্জুর করেনি দল।
ঘটনাচক্রে, কারাট এখন কেরলেই। ই কে নায়নারের প্রয়াণ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, টি পি-হত্যায় দলের কেউ জড়িত বলে প্রমাণ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। আরএমপি-র ওই নেতাকে নৃশংস ভাবে খুন করার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ বলে মন্তব্য করে কারাট সাফ বলেছেন, সিপিএম কখনও হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের একমাত্র ‘অস্ত্র’ মতাদর্শ। ভি এসের ক্ষোভে আপাতত প্রলেপ দেওয়ার জন্যই কারাট দলের কেউ দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির কথা বলেছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। যদিও ভি এসের ক্ষোভ তাতে প্রশমিত হয়েছে বলে খবর নেই!
বস্তুত, কেরলে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এমনই পর্যায়ে যে, একই সঙ্গে বিজয়ন শিবিরের কথাও ভাবতে হচ্ছে কারাটকে। সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দল তাঁকে শাস্তি দেবে ঠিকই। কিন্তু টি পি-হত্যার ঘটনায় শাসক ইউডিএফ এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে সিপিএমের ‘ভাবমূর্তি’ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ঠিক যে কথা বিজয়নও বলেছেন। ওই খুনে জড়িত সন্দেহে আটক আরও এক জন স্থানীয় নেতাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে সিপিএমের প্রতিবাদের জেরেই। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “কেরলের পরিস্থিতির জন্য নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকটাই জটিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।” |