অর্থাভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে এ বার জলে ব্যবসা করতে নামছে ‘ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কর্পোরেশন’ (সিটিসি)। ভবিষ্যতের কথা ভেবে দু’দশক আগে সিটিসি যাত্রী-পরিবহণের জন্য রাস্তায় বাস নামিয়েছিল। এ বার গঙ্গায় ফেরি-পরিষেবার জন্য বেসরকারি সংস্থার হাত ধরবে তারা।
সিটিসি-র যা হাল, বেতন দিতেই অর্থ দফতরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এই অবস্থায় আয় বাড়ানোর আশায় গঙ্গায় ফেরি-পরিষেবা চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চান রাজ্যের জলপথকে আরও সমৃদ্ধ ও কার্যকর করতে।” রেল ও রাস্তার চাপ কমাতে জলপথ ব্যবহারে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা আগেই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। |
কলকাতায় যাত্রী পরিবহণের জন্য ১৮৮০ সালের ২২ ডিসেম্বর লন্ডনে তৈরি হয় ‘দ্য ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড’। ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয় শিয়ালদহ-বৌবাজার স্ট্রিট-ডালহৌসি স্কোয়ার-স্ট্র্যান্ড রোড-আর্মেনিয়ান ঘাট পথে। ক্রমে রুট বাড়ে। ট্রামের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩১৫। আটের দশকের গোড়াতেও প্রায় ২৭৫টি ট্রাম চলত। দৈনিক ট্রামযাত্রীর সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লক্ষের মতো। কিন্তু তখনই বাজতে শুরু করে ট্রামের মৃত্যুঘণ্টা। শহরে ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকের ২৫ কিলোমিটার ছিল সংরক্ষিত। যান চলাচলে গতি আনতে পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া হয় রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, দেশপ্রাণ শাসমল রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের মতো বিভিন্ন রাস্তার সংরক্ষিত পথ। এই অবস্থায় ১৯৯২ সালে রাস্তায় বাস নামায় ট্রাম সংস্থা। এর পরে এখন জলপথ-পরিবহণের সিদ্ধান্ত।
এখন ইস্পাতের তৈরি ‘একটু ভাল মানের’ ফেরির প্রতিটির দাম পড়ছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। এ কথা জানিয়ে শান্তিলালবাবু বলেন, “প্রথমে পাঁচ-ছ’টি ফেরি দিয়ে পরিষেবা চালু করা যেতে পারে।” গঙ্গার দু’পাড়ে যাত্রী পারাপার করবে সিটিসি-র ওই ফেরি। কেন্দ্রীয় সহায়তায় কয়েক বছর আগে ত্রিবেণী পর্যন্ত ৩২৪ কিলোমিটার অংশে ৫৭টি গ্যাংওয়ে-পন্টুন তৈরি হয়েছে। এর জন্য খরচ হয়েছে ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এই পরিকাঠামোর সুফলও মিলবে বলে সিটিসি কর্তৃপক্ষের আশা।
জল-পরিবহণ ব্যবসায় রাজ্য সরকারের অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর নয়। ১৯৮৯ সালে চালু হয় পশ্চিমবঙ্গ অভ্যন্তরীণ জলপথ নিগম লিমিটেড। পরবর্তীকালে এটি যাত্রী পরিবহণে বাসের ব্যবসায় নামে। নিগমের নাম বদলে হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম’। কাকদ্বীপ অঞ্চলে এদের তিনটি লঞ্চ এবং গঙ্গায় ১৪টি লঞ্চ চলে। সরকারি অনুদানের উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হয় নিগমকে।
এত তীব্র অর্থাভাবে ফেরি কেনার টাকা আসবে কোথা থেকে? সিটিসি-র চেয়ারম্যান বলেন, “বেসরকারি সহায়তায় পিপিপি মডেলে নামানো হবে ফেরিগুলি। আগ্রহী কয়েক জনের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে।” |