|
|
|
|
সংযোগ নেই, জল কিনে খেতে হয় বাসিন্দাদের |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
স্টেশন থেকে পশ্চিমে টিলার উপরে রয়েছে পার্বতী মন্দির। কেউ বলেন, সতীর দেহাংশ নলা এখানে পড়েছিল বলে নলহাটিতে দেবী কালীকা বা ভৈরব যোগেশ বিরাজ করেন। কেউ আবার বলেন, দেবীর ললাট পড়েছিল, তাই এই দেবী নলাটেশ্বরী। শুধু দেবীর মন্দির রয়েছে তাই নয়, মসজিদ, সমাধি, পীর বাবার সমাধিস্থলও আছে। যাকে ঘিরে রয়েছে পাহাড়।
নলহাটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এই সব পাহাড় এলাকা বেদখল হচ্ছে তা নয়, পাহাড়ের ব্লক অফিস পাড়া লাগোয়া এলাকায় দিনের বেলাতেই দেখা গেল মোরাম চুরি করতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ভাবে পাহাড় কেটে মোরাম পাচার করা হয়। কিন্তু কেউ আটকানোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। প্রসঙ্গত, এই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পূর্বের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পীরণপাড়া, লেটপাড়া, কবরডাঙা পাড়া, বাইপাস এলাকা ঢুকেছে। এই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বন্দনা ক্ষীরহরির দাবি, “বেদখল ও মোরাম চুরি রুখতে পুরসভায় জানিয়েও লাভ হয়নি। শুধু তাই নয়, মন্দিরকে ঘিরে সৌন্দর্যায়ন, পিকনিক স্পট ও শিশু উদ্যান করার দাবি জানিয়েও কিছুই হয়নি।” বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, “কাউন্সিলর এ পর্যন্ত আমার কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। বছর তিনেক আগে আমার কাছে খবর আসার পরে বিষয়টি দেখার জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানিয়েছি। তবে পুরসভার উদ্যোগে পাহাড়ের মাজার এলাকা সাজানো হয়েছে, মন্দির আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে, শিশু উদ্যানের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং পাহাড়ে যাতে সহজে ওঠা যায় সে জন্য সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে।”
বিপ্লববাবুর দাবির সঙ্গে বাস্তবে মিল রয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা হীরালাল ভকত কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জগন্নাথ রায়চৌধুরীর আক্ষেপ, “একটি পলিটেকনিক কলেজের জন্য শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কলেজ তৈরির বিষয়টি বিশবাঁও জলে পড়ে আছে। এমন কী অরুণাচল কলোনি এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ট্যাপ কলের অভাবে পানীয় জল এলাকার বাসিন্দারা পান না। বেশিরভাগ বাসিন্দাকে জল কিনে খেতে হয়।”
বন্দনাদেবীর অভিযোগ, “আমি যেহেতু তৃণমূলে যাইনি, তাই আমার চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ওয়ার্ডের স্কুলগুলিতে রাঁধুনির জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের নিয়োগ করা হয়নি এবং পাইপলাইনের কাজ করার সময়ে কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।” এই সব অভাব অভিযোগের পাশাপাশি এক লাখি বাড়ি নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। পীরণপাড়ার বাসিন্দা নজরুল শেখের অভিযোগ, “এক লাখি বাড়ির জন্য পুরসভায় ১৬ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার নামে বাড়ি নির্মাণের বাকি টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু বাড়ি হয়নি।” এই সব ক্ষোভ শোনার পরে পীরণপাড়া ছাড়িয়ে বাইপাস যাওয়ার পথে দেখা গেল, রাস্তার দু’ধারে জমে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। গন্ধে টিকতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। পীরণপাড়ার মির্জা দোস্ত মহম্মদ বলেন, “এলাকায় জল সমস্যা মেটাতে নিজেরাই খরচ করে দু’টি ট্যাপের সংযোগ করা হয়েছে।” সিপিএম প্রার্থী আব্দুল বাকি আবু হাসনাতের দাবি, “বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে যে ধরনের উন্নতি হওয়া উচিত ছিল পুরসভা তা করতে পারেনি। লেটপাড়া, পিরণপাড়া-সহ অন্য এলাকার প্রকৃত গরিব মানুষেরা বঞ্চিত হয়েছেন।” তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত দত্তের অভিযোগ, “কংগ্রেস কাউন্সিলরের অসহযোগিতার জন্য উন্নয়নমূলক কাজ বাধা পেলেও পুরপ্রধানের উদ্যোগে কিছু কাজ হয়েছে।”
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, উন্নয়ন প্রশ্নে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। অথচ ওয়ার্ডের এখনও অনেক জায়গায় রাস্তা না হওয়ায় আলপথ দিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে ময়লা ফেলার গাড়ি ও জঞ্জাল জমে থাকছে। এ ছাড়া, পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়, মন্দিরকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্রের পরিকল্পনা ঠিক মতো কার্যকরও হচ্ছে না। |
|
|
|
|
|