|
|
|
|
ঝড়ে নষ্ট ট্যাঙ্ক, ক্ষতি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্পের |
ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • সিউড়ি |
‘বৃষ্টির জল সংরক্ষণ’ প্রকল্পে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালে স্কুলে তৈরি হয়েছিল পরিকাঠামো। যদিও কোনও দিনই সেই পরিকাঠামো ব্যবহার করা হয়নি। ‘অব্যবহারে’ ও ‘রক্ষণাবেক্ষণে’র অভাবে নষ্ট হতে শুরু করেছিল ওই প্রকল্পের জল ধারণের দামি ট্যাঙ্কগুলি। মাঝে চুরি যায় ওই প্রকল্পের বেশ কিছু পাইপও। এ দিকে সাম্প্রতিক ঝড়ে স্কুল চত্বরে পিলারের উপরে বসানো সেই সমস্ত জলের ট্যাঙ্কগুলি দুমড়ে মুচড়ে উল্টে স্কুলের মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বড় বড় ট্যাঙ্কগুলি নড়াচড়া করতে গিয়ে স্কুলের কয়েকজন ছাত্র অল্পবিস্তর জখমও হয়। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া প্রকল্পের এমন বেহাল চিত্র সিউড়ির কড়িধ্যার কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দায় এড়িয়ে দ্বারস্থ হয়েছে প্রশাসনের কাছে। চুরির বিষয়ে তারা লিখিত অভিযোগও করেছেন। |
|
স্কুল চত্বরে এ ভাবেই পড়ে আছে জলের ট্যাঙ্ক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত এলাকায় পানীয় জলে ফ্লোরাইড আছে, সেই সমস্ত এলাকায় ইন্সটিটিউট অফ এনভাইরনমেন্টাল স্টাডিস এন্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সহায়তায় চালু করা হয় ‘বৃষ্টির জল সংরক্ষণ’ প্রকল্প। পুরুলিয়া, বীরভূমের যে সব এলাকার জলে ফ্লোরাইড আছে সে সব এলাকার লোকজনকে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে এবং পরিশ্রুত পানীয় জল সম্পর্কে সচেতন করতে ওই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে প্রকল্পের কাজে হাত দেয় ওই সংস্থা। সংস্থার দাবি, চুক্তি ছিল প্রকল্পটি তৈরি করে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রকল্প তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তা চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে স্কুল কর্তৃপক্ষের। প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি ঘিরে ওই স্কুল চত্বরে ছাত্রছাত্রী থেকে এলাকার মানুষজনকে নিয়ে একটি সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠানও করা হয়।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া ওই প্রকল্পটি কেন ব্যবহারই করা হল না? ওই স্কুলে প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী বা কে? কলকাতায় স্থিত ওই সংস্থার দফতরে যোগাযোগ করা হলে সংস্থার ডিরেক্টর অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকার জলে ফ্লোরাইড থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সরকারের টাকায় প্রকল্পটি রূপায়িত হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি প্রকল্পটি ব্যবহার বা রক্ষণাবেক্ষণ না করে থাকেন তার দায় আমাদের নয়। তাই ওই প্রকল্পের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে যা বলার স্কুল কর্তৃপক্ষই বলবেন।” অন্যদিকে কড়িধ্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ঠাকুর জানান, প্রকল্পটি তৈরি হওয়ার পর তিনি এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “স্কুলের তেমন ফান্ড না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও কর্মী বা রক্ষী ছিল না। ফলে প্রকল্পের বেশ কিছু কানেক্টিং পাইপ চুরি হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্পটি ব্যবহারই করা যায়নি।” তিনি আরও বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। তারপর থেকে ৩০টি জলের ট্যাঙ্ক-সহ প্রকল্পের যাবতীয় জিনিসপত্র এমনিই পড়ে ছিল।” স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক উৎপল দত্ত-রও দাবি, “তৈরি হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় কানেক্টিং পাইপ চুরি হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। স্কুলের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় বলেই পরবর্তী সময়ে আর ওই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়নি।” এরপরেই গত ২৫ এপ্রিলের ঝড়ে প্রকল্পের ট্যাঙ্কগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাঠে পড়ে যায়। বেশ কয়েকটি ট্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। সেগুলি নিয়ে নড়াচড়া করতে গিয়ে জখম হয় কয়েকজন ছাত্রও। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ওই ঝড়ে ট্যাঙ্কগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে ফের বেশ কিছু কানেক্টিং পাইপ ও অন্যান্য মালপত্রও চুরি ও নষ্ট হয়ে যায়।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কড়িধ্যার স্কুলে লক্ষ লক্ষ টাকায় তৈরি হওয়া ওই প্রকল্পের ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি নয় কোনও পক্ষই। নির্মাতা সংস্থাও খোলাখুলিই জানিয়েছে ওই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের নয়। এ দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ চুরির ব্যাপারে সিউড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ট্যাঙ্কগুলি সারানো ও চুরির বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও, নির্মাতা সংস্থা এবং জেলাশাসকের কাছে জানানো হয়েছে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিওকে বলেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে।” |
|
|
|
|
|