ব্রিটেনে পড়তে আসা ভারতীয় ছাত্রদের সংখ্যা কমে গেল প্রায় ৩০ শতাংশ। কিছু দিন আগেই ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছে, অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে দশ হাজার করা হবে। পড়ার শেষে এ দেশে কাজ করার জন্য ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দেওয়াও সম্প্রতি বন্ধ করে দিয়েছে ব্রিটেন। সরকারের এই নয়া নীতির জেরেই ছাত্রসংখ্যায় কোপ পড়ল বলে মনে করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলি থেকে ব্রিটেনে প্রতি বছর পড়তে আসেন প্রায় তিন লক্ষ ছাত্রছাত্রী। এর একটা বড় অংশ আবার ভারতীয়। পড়ার খরচ বাবদ এই পড়ুয়ারা যে অর্থ দেন, তা ব্রিটেনের বহু বিশ্ববিদ্যালয়েরই আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু অভিবাসনের কড়াকড়ির ফলে এই ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ এই মুহূর্তে ব্রিটেনে পড়তে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে খবর। তাঁদের পছন্দের তালিকায় বরং উঠে আসছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেখানে পড়ুয়াদের ভিসা দেওয়ার নিয়মকানুন তুলনামূলক শিথিল। পড়ার শেষে কাজ করার সুযোগও বেশি।
এতেই প্রমাদ গনছে ব্রিটেনের বহু বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে সে কথা জানিয়েওছেন কর্তৃপক্ষ। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এরিক টমাস এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, নয়া অভিবাসন নীতির ফলে পড়ার খরচ বাবদ বিদেশি ছাত্রদের থেকে পাওয়া প্রায় পাঁচশো কোটি পাউন্ড ‘খোয়াবে’ ব্রিটেন। তাঁর বক্তব্য, “এতে বার্তা যাচ্ছে যে ব্রিটেনে সব বিদেশি ছাত্ররা মোটেই স্বাগত নয়। ভারত আর চিনও দেখছে যে, তাদের এ দেশে ঢোকা বন্ধ করার চেষ্টা করছে ব্রিটেন।” বার্মিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণার পরই ভারত থেকে আবেদনপত্রের সংখ্যা কমে গিয়েছে। প্রতি বছর যেখানে ভারত থেকে গড়ে প্রায় এক হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে, ২০১২-তে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৫০। শুধু অভিবাসন নীতিই নয়, বিদেশি ছাত্ররা যে এ দেশে সত্যিই পড়াশোনা করছেন, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তাঁদের উপরে নানা ভাবে ‘নজরদারি’ করার ব্যবস্থা চালু করেছে ব্রিটিশ অভিবাসন দফতর। এতে কিছুটা ‘একঘরে’ বোধ করছেন তাঁরা। এ দেশে পড়তে না আসার এটাও একটা অন্যতম কারণ বলে মত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
এত দিন পড়া শেষের পর দু’বছর এ দেশে থেকে কাজ করার অনুমতি মিলত। বহু পড়ুয়াই ব্যাঙ্কঋণ শোধ করতে ওই সুযোগ কাজে লাগাতেন। কিন্তু এখন সেই ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ দেশে পড়তে আসার উৎসাহে ভাটা পড়েছে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে এখানে কাজ করছেন কলকাতার কুষাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “২০১০-এ যখন আবেদন করি তখনও ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া বন্ধ হয়নি। তখন এই নিয়ম থাকলে আবেদনই করতাম না।” তাঁর সাফ কথা, “ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা এখানে পড়তে আসেন, পড়া শেষে কাজের সুযোগ না পেলে তাঁরা কেন আসবেন? তাই ছাত্রসংখ্যা কমছে।” |