তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাদের দলের লোকজনের উপরে চড়াও হচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক তথা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে এমনই অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। মহকুমাশাসক আয়েষা রানি অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন ফুলঝোড় গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ রায়। তাঁর ভাই বিভাস রায় তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কংগ্রেসে যোগ দেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিভাসবাবুকে দল প্রার্থীপদ না দেওয়ায় তিনি দল ছেড়েছেন। বিভাসবাবু ফুলঝোড় গ্রামে তৃণমূলের একটি অফিস খুলেছিলেন। দল ছাড়ার পর সেটিকেই তিনি কংগ্রেস কার্যালয় করেছেন। শনিবার তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে কংগ্রেসের পতাকা তোলা হয়। ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ লেখাটি মুছে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এর পরেই এক দল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক কার্যালয়টির দখল নিতে যায়। তা থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। |
মহকুমাশাসকের কাছে দায়ের করা অভিযোগে কংগ্রেস প্রার্থী বিকাশবাবু জানিয়েছেন, এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দীপু লাহার নেতৃত্বে সশস্ত্র ১০-১৫ জন লোক তাঁকে, তাঁর ছেলে ও ভাই বিভাসবাবুকে মারধর করে। খুনের হুমকিও দেয়। একজন তাঁর পকেট থেকে আড়াই হাজার টাকাও বের করে নেয় বলে অভিযোগ। বিকাশবাবুর কথায়, “মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব আতঙ্কে আছি।” এ দিন ঘটনার খবর পেয়েই নিউ টাউনশিপ থানা থেকে পুলিশ পৌঁছয়। পুলিশ ওই কার্যালয়টিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এলাকায় পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ জানায়, সরকারি জমির উপরে তৈরি হয়েছে ওই কার্যালয়টি। তাই সেটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভাসবাবুর অবশ্য দাবি, “শহর জুড়ে সরকারি জমিতে তৃণমূলের কার্যালয় রয়েছে। এই কার্যালয়টি গড়া হয়েছে ২০১০ সালে। এত দিন পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন শাসক দলকে সুবিধা করে দিতেই এটি বন্ধ করা হল।”
সিপিএমের পক্ষ থেকেও শুক্রবার মহকুমাশাসকের কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়। সিপিএমের তরফে জানানো হয়, পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লিতে সে দিন রাত ৮টা নাগাদ দলীয় কার্যালয়ে স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা পুরভোটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর নির্বাচনী এজেন্ট অধীর ঘোষ মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, হঠাৎ তৃণমূলের ১৫-২০ জন লোক এসে সিপিএম কর্মীদের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। কার্যালয়টি চিরদিনের জন্য বন্ধও করে দিতে বলে তারা। অধীরবাবু বলেন, “আমাদের কর্মীদের গালিগালাজ করা হয়। ভয় দেখিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল।”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমের মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ মানায় না। মানুষ জানেন, ওরা বছরের পর বছর কী ভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করে এসেছে।” কংগ্রেসের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে অপূর্ববাবুর পাল্টা দাবি, তৃণমূলের কার্যালয় জোর করে দখল করতে চেয়েছিল কংগ্রেস। স্থানীয় তৃণমূল-কর্মী সমর্থকেরা প্রতিবাদ করেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। |