খোশ মেজাজে মেলায় ঘুরে কেনাকাটা, ছবি আঁকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাড়ির বড় দিদি যেন সপ্তাহান্তের বিকেলে খোশমেজাজে বাজার করতে মশগুল।
বোলপুরের হাসনুহানা বেগমের বাটিকের চূড়িদার বা বাঁকুড়ার দীপালি করের পসরার গামছা দেখামাত্র তাঁর মনে ধরে গেল। মেলায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে পেয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ওই মহিলারা তখন বিক্রিবাটা ভুলে গিয়েছেন।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর বা নগরোন্নয়ন দফতরের স্টলে রকমারি পসরা নিয়ে প্রস্তুত পাড়াগাঁ কি মফস্সলের বিক্রেতারা কিছু ক্ষণ বিভোর হয়ে ‘দিদি’র হাত ধরেই বসে থাকলেন। দিদি হাসিমুখে জিনিস পছন্দ করে দাম মেটানোর জন্য তাঁর ভাইয়েদের কাছেই আব্দার করেছেন। ‘ববি (মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম) এইটা নে তো’, বা ‘শঙ্কু (ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা) তোকে আমি পরে টাকা দিচ্ছি’ বলে মন দিয়ে কেনা-কাটা সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ইস্ কালো রং কিনছে, হলুদটা নিন!’—বলে দলের প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বৌমার টপটাও মমতা নিজে বেছে দিয়েছেন। |
|
মিলনমেলায় কেনাকাটায় ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ আচার্য |
পরিবর্তনের বর্ষপূর্তিতে মিলনমেলা-চত্বরে প্রগতি উৎসব চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। শনিবার, মেলার প্রথম দিনের বিকিকিনি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই শুরু হয়ে গেল। মূল মঞ্চের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘেরাটোপে বেশি ক্ষণ আটকে থাকেননি মমতা। প্রোটোকল-মাফিক রাজ্যপালকে বিদায় জানানোর পর থেকেই তিনি জনতার মাঝে। ভিআইপি অতিথিদের সঙ্গে চা-চক্র ছেড়ে ‘ভক্ত’দের উন্মাদনার নিরিখে নিজের জনপ্রিয়তাও পরখ করে নিলেন এক বছর পরে।
ভক্ত বলতে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের পড়শি থেকে দূর মফস্সলের উৎসাহী কলেজছাত্র। ‘দিদি’কে এক বার স্পর্শ বা প্রণাম করতে নাছোড়বান্দা ঢঙে যাঁরা বার বার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যূহ ভেঙেছেন। এই ‘উন্মাদনা’র সৌজন্যেই বিদ্যুৎ দফতরের স্টলের মেঝে ধসে গিয়েছে। তবে উৎসবের তাল কাটেনি তাতে। বরং এক বছর বাদে এখনও তিনি যে ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর মুখ্যমন্ত্রী, তারই সাক্ষী থেকেছে গোটা চত্বর।
মেলার মাঠের আবহসঙ্গীতেও শোনা গিয়েছে ‘মা-মাটি-মানুষের জয়’। কলকাতার বেশির ভাগ ট্র্যাফিক সিগন্যালে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সরিয়ে এ দিন যা গোটা শহরেরই ‘থিম সং’ হয়ে উঠেছে।
সপ্তাহব্যাপী মেলায় কী করলে দলে দলে আসবে এই ‘মা-মাটি-মানুষ’? ঝকঝকে প্যাভিলিয়নে সরকারি পরিকল্পনাতেও এই ভাবনাটাই এখন প্রধান। রাজ্য পুলিশের ছিমছাম স্টলে তাই আমজনতাকে জাল নোট চিনতে শেখাচ্ছে সিআইডি। আইবি-র মিউজিয়াম থেকে আনা হয়েছে আজাদ হিন্দ ফৌজের বেতার কেন্দ্রের সরঞ্জাম বা অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের বোমা। কলকাতা পুলিশের টেক্কা ট্রাফিক-সচেতনতার মডেল খোকাবাবু বা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের জলজ্যান্ত ‘স্পাইডারম্যান’রা। প্রাণিসম্পদ বিকাশের স্টলে লাইভ স্টক কর্পোরেশনের উপহার সুস্বাদু টার্কি, হ্যাম, সসেজ।
গ্রামোন্নয়নের স্টলে এ দিনই চালু হল রাজ্যের নিজস্ব পানীয় জলের ব্র্যান্ড ‘জলধারা’। সেই জল গলায় ঢেলে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী। মেলা ছেড়ে বেরোনোর আগে কিছু ক্ষণ শুনেছেন রাশিদ খান-নচিকেতার যুগলবন্দিও।
কারা দফতরের স্টলে বন্দিদের ছবি আঁকার শিবিরে ঢুকে নিজেই ছবি আঁকায় মশশুল হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সুজাতা দত্তের সঙ্গে একান্ত আলাপে এক বার তাঁর পিঠে স্নেহের হাত রাখলেন মমতা। বিকেলের সব থেকে গভীর মুহূর্তটি সম্ভবত তৈরি হল তখনই। |
|