|
|
|
|
কটাক্ষ সিপিএমেরও |
শিল্প-জমি নীতি ‘ভুল’, মূল্যায়নে কড়া কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জঙ্গলমহল এবং দার্জিলিঙে ‘শান্তি’ ফেরানো ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রথম বছরে তেমন কোনও ‘সাফল্যে’র কৃতিত্ব নেই বলেই দাবি করল
জোট শরিক কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার যখন বর্ষপূর্তির সরকারি অনুষ্ঠানে সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছেন, প্রায় একই সময়ে সরকারের শরিক হয়েই এক বছরের ‘কড়া’ মূল্যায়ন পেশ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। মমতার সরকারের বর্ষপূর্তি উৎসবকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম-ও।
প্রদীপবাবু এ দিন সাফ বলেছেন, “জঙ্গলমহলের উন্নয়ন এবং দার্জিলিঙে শান্তি ফিরিয়েছে নতুন সরকার। তবে ১০০% কাজ হয়ে গিয়েছে বলে বারবার যে কথা সরকার বলছে, তা একেবারেই ঠিক নয়! সবে কাজ শুরু হয়েছে। এক বছরেই সব কাজ শেষ করে ফেলা সম্ভব নয়!”
বরং, শিল্পোদ্যোগ থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলা কোনও ক্ষেত্রেই বিগত বাম সরকারের তুলনায় ‘অবস্থার বদল’ হয়নি বলে সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের ২১ পাতার রিপোর্টে। এমনকী, সরকারের তরফে সাফল্যের যে হিসেব দেওয়া হচ্ছে, তা ‘অসত্য’ বলেও দাবি করেছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। শিল্পায়নে গতি আনতে সরকারের শিল্প ও জমি নীতি ‘পুনর্বিবেচনা’র প্রস্তাব দিয়ে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, “জমি না-দিলে শিল্প কী ভাবে হবে? সরকারের শিল্প ও জমি নীতিটাই ভুল! নীতিটা নিয়ে আবার ভাবুন। আমাদের প্রস্তাব, সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন বণিকসভাকে নিয়ে বৈঠকে বসুন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের কী ভাবে আনা যাবে, সেটা আলোচনা করে ঠিক করুন।” তাঁর মতে, একক প্রচেষ্টায় শিল্পপতিদের পক্ষে জমি কেনা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দালাল শ্রেণি তৈরি হতে পারে। ‘ভ্রান্ত’ শিল্পনীতির জন্যই ইনফোসিস এ রাজ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত করে প্রদীপবাবুর মন্তব্য, “ইনফোসিসকে এ রাজ্যে আনা উচিত। এসইজেড (বিশেষ আর্থিক অঞ্চল)-এর সুবিধাও দেওয়া উচিত। না-হলে এ রাজ্যের গায়ে শিল্পবিরোধী তকমা পড়ে যাবে।” প্রসঙ্গত, জমি, শিল্প, ইনফোসিসের মতো প্রশ্নে সরকারের শরিক প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, সিপিএমের ‘জনবিচ্ছিন্নতা’ এখনও কাটেনি আবার তৃণমূল সম্পর্কে মানুষের ‘স্বপ্নভঙ্গ’ হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ‘শূন্যস্থান’ ভরাট করার লক্ষ্য থেকেই কংগ্রেস রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তির দিনই এমন ‘কড়া’ মূল্যায়ন প্রকাশ্যে এনেছে। আবার অন্য একাংশের ধারণা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বড় শরিকের উপরে ‘চাপসৃষ্টি’র কৌশলই কংগ্রেসের মাথায় রয়েছে।
অন্য দিকে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কড়া সুরে বর্ষপূর্তি উৎসবের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পলিটব্যুরোর সদস্য তথা এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরিও সরকারের প্রতিশ্রুতি পালন করা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেছেন। বিমানবাবুর বক্তব্য, “এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী বারবার অর্থ সঙ্কটের কথা বলছেন। অন্য দিকে, বেহিসাবি টাকা খরচ করে মেলা করছেন! উৎসবের পিছনেই সরকার খরচ করছে ২০ কোটি টাকা! এতে রাজ্যের ভাল হবে না।”
সরকারের এক বছর পূর্তিতে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্র ধরেই বিমানবাবু বলেন, “কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম না-পেয়ে আত্মহত্যা করছেন। পরিবহণ কর্র্মীরা মাইনে পাচ্ছেন না। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অথচ উনি লক্ষ লক্ষ চাকরির কথা বলছেন!” তাঁর কটাক্ষ, “এক বছরে ১০০% দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই রাজ্য সরকারের সাফল্য!” মমতার কর্মসংস্থানের খতিয়ান নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবুও বলেছেন, নতুন শিল্পের অভাবে সরকার কর্মসংস্থানের ‘দিশা’ দেখাতে পারেনি। তাঁর বক্তব্য, “কর্মপদ তৈরি করা আর বেকারদের কাজ দেওয়া এক নয়! বেকারদের জন্য সরকারের পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।”
কলকাতায় এ দিন প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেছেন, “সরকারের এক বছর পূর্তি উৎসব করার অধিকার ওদের আছে। কিন্তু দেখতে হবে ওরা মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ঠিকমতো পালন করছে কি না। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি পালন করছেন কি না, রাজ্যের মানুষই তা বিচার করবেন।” উত্তর ২৪ পরগনার গৌরীপুরে এ দিন এক সভাতেও ইয়েচুরি বলেন, খুন-ধর্ষণ-চুরি-ডাকাতি যখন বাড়ছে, কৃষক ফসলের দাম না-পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তখন রাজ্য সরকার উৎসব করছে! |
|
|
|
|
|