‘ব্যথা’ হয়েই রইল সিঙ্গুর।
ঠিক এক বছর আগে, ২০১১ সালের ২০ মে শপথ নেওয়ার পরে মহাকরণে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল, জমি ফেরত দেওয়া হবে সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষিদের। কিন্তু অর্ডিন্যান্স বিতর্ক পেরিয়ে, বিল এনেও সেই জমি ফেরানো সম্ভব হয়নি। শনিবার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে ‘প্রগতি উৎসব’-এ সেই সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির মঞ্চে জমি ‘ফিরিয়ে’ দিতে না পারায় অকপটে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এক বছরে দাঁড়িয়ে কেউ যদি প্রশ্ন করেন, আমার কষ্টের জায়গাটা কোথায়? আমি বলব, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করলেও মামলার কারণে অনিচ্ছুক চাষিদের তা আমরা ফেরত দিতে পারিনি। এটাই আমার মনের দুঃখ, মনের ব্যথা।”
সেই ‘ব্যথা’ থেকেই এ দিন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের মাসে এক হাজার টাকা করে ‘অনুদান’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা। তিনি বলেন, “এক বছর ধরে মামলা লড়ছি। কোর্টে ফয়সালা হয়ে গেলেই সিঙ্গুরের জমি ফেরত দিতে চাই। যত দিন না হচ্ছে, সেখানকার ৪০০ একরের মধ্যে যাঁদের জমি পড়েছে, সেই অনিচ্ছুক চাষি ও খেতমজুরদের নতুন প্রকল্পে মাসে এক হাজার টাকা দেবে সরকার।”
শুধু টাকাই নয়, ওই কৃষক পরিবারগুলিকে কম দামে চাল দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিরা খুব কষ্টে আছেন। জঙ্গলমহল কিংবা চা বাগানের শ্রমিকদের মতো ওঁরাও যাতে দু’টাকা দরে চাল পান, সেটা দেখতে বলব বালুকে (খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের
ডাক নাম)।”
মুখ্যমন্ত্রী এই ‘সাহায্য’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, যখন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের মধ্যে কমবেশি ‘হতাশা’ তৈরি হয়েছে। জমি যে এখনই ফেরত পাওয়া যাবে না, তা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ক্ষোভ তাঁদের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের আচরণে। একাধিক অনিচ্ছুক চাষির বক্তব্য, “গ্রামে তৃণমূল নেতাদের আনাগোনা কমে গিয়েছে। আবার হয়তো পঞ্চায়েত ভোটের আগে দেখা মিলবে।” সেই ‘হতাশা’ আরও বেড়েছে ইদানীং মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরমুখো না হওয়ায়। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ক্ষমতা দখলের আগে জমি আন্দোলন পর্বে ৩৮ বার সিঙ্গুরে এসেছিলেন মমতা। আর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মাত্র এক বার, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর।
আর সেই ‘হতাশা’ থেকেই তাঁরা বলতে শুরু করেছেন, “মদ খেয়ে মরলে সরকার টাকা দিচ্ছে। আগুনে পুড়লেও। কিন্তু আমাদের জন্য কোনও ‘ক্ষতিপূরণ’ই বরাদ্দ করেনি সরকার।” এমনকী, জঙ্গলমহলের মতো তাঁদেরও ‘প্যাকেজ’ দেওয়া হোক, এই দাবি নিয়ে ক’দিন আগে সিঙ্গুরের বিধায়ক, রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছে দাবিও জানিয়েছেন অনিচ্ছুক চাষিদের একাংশ। এবং তা পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও।
সেই দাবি-ই এ দিন পূরণ করলেন মমতা। |