বায়ার্ন মিউনিখ-১ (৩) (মুলার)
চেলসি-১ (৪) (দ্রোগবা) |
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের দিন আপনার স্বপ্ন কী? অনেক তারকাকে প্রশ্নটা করেছিল উয়েফা। এবং সেখানে লুইস ফিগোর প্রার্থনা ছিল, “বায়ার্ন মিউনিখ চ্যাম্পিয়ন হলে বেকেনবাউয়ারকে গান গাইতে শোনা।”
বেকেনবাউয়ার দুঃখের গান গাইতে পারেন! নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগএই মহাকাব্যিক ছবি কোনও ক্লাব আধুনিক ফুটবলে আঁকতে পারেনি। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ১-০ এগিয়ে, অতিরিক্ত সময়ে একটা পেনাল্টি নষ্ট (সৌজন্য রবেন), ২০টি কর্নার নষ্টমহাকাব্যিক ছবি হতে হতেও হল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এ বার মহাতারকাদের ভিখিরি করে ছেড়েছে পেনাল্টিতে। মেসি, রোনাল্ডো, কাকার পরে এদিন পেনাল্টিতে ভিখিরি হলেন রবেন। অতিরিক্ত সময়ে। টাইব্রেকারে ভিখিরি হলেন সোয়াইনস্টাইগার। পেনাল্টি পোস্টে মেরে বোঝালেন, জার্মানরাও ব্যর্থ হন। মহাকাব্যিক ছবি তৈরি করল চেলসিপ্রথম ইউরোপ সেরা হয়ে। |
ম্যাচের আগে মিউনিখের রাস্তা: নকল ট্রফি নিয়ে বায়ার্ন সমর্থক।
ক্লাবের পতাকা ওড়াচ্ছেন চেলসির ভক্ত। ছবি: রয়টার্স, গেটি ইমেজেস |
মাঠে এবং মাঠের বাইরে একেবারে সম্পূর্ণ দুটো স্টাইলের দুটো দল। মাঠে এই বায়ার্ন একেবারে বার্সেলোনা ঘরানারযারা বিশ্বাস করে বল পজেশন আর পাসিং জেতাবে। চেলসি সেখানে জমাট রক্ষণ এবং প্রতিআক্রমণের জন্য বিখ্যাত। মাঠের বাইরে চেলসির রাশিয়ান মালিক জলের মতো অর্থ খরচ করেন, তিনিই সব। বায়ার্ন সেখানে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি হিসেব কষে চলা ক্লাব। ক্লাব ম্যানেজমেন্টে পনেরো জনের বেশি প্রাক্তন। বেকেনবাউয়ার, রুমেনিগে, উলি হোনেসের দর্শন হল, “আয়ের চেয়ে বেশি খরচ কখনও নয়।”
ফাইনালটা শুরুও হল ওই বৈপরীত্যের মধ্যে দিয়েও। দুটো দলেরই ছক এক ৪-২-৩-১, কিন্তু বৈপরীত্যে একেবারে লন্ডন এবং মিউনিখ। বায়ার্ন শুরু করল পাসিং ফুটবলের অস্ত্রে শান দিয়ে। বাঁ দিক দিয়ে রিবেরি, ডান দিক দিয়ে রবেনের উইং ধরে দৌড় দিয়ে। দুই তারকার যুগলবন্দিকে লেখা হয় ‘রবেরি’। বিপক্ষের রক্ষণে সত্যিই ডাকাতি করছিলেন তাঁরা। রিবেরির ড্রিবলিংয়ে প্লাতিনি ফুটে ওঠে, পাসিংয়ে জিদান। কর্নারের পরে কর্নারবিরতির আগেই অন্তত ৩-১ হওয়া উচিত ছিল বায়ার্নের পক্ষে। ৮৩ মিনিটে মুলার দুর্দান্ত হেডে ১-০ করার পরে মনে হয়েছিল ম্যাচটা বায়ার্নের। ৮৮ মিনিটে দ্রোগবা আর একটা দুর্দান্ত হেডে ১-১ করার পরে খেলা গেল অতিরিক্ত সময়ে।
চেলসি কোচ দি মাতিও চমকে দিয়েছিলেন প্রথম এগারোয় অনামী লেফট ব্যাক বার্টান্ডকে মাঝমাঠে রেখে। সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে চমকে দেওয়া স্ট্র্যাটেজি। অঙ্ক একটাই-- ডানদিক দিয়ে যাতে রবেন এবং লাম স্বচ্ছন্দে উঠতে না পারেন। লামের ওভারল্যাপিং বন্ধ হল। কিন্তু যত সময় গেল, চেলসি রক্ষণাত্নক বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কখনও মনে হচ্ছিল, সেমিফাইনালে চেলসি বনাম বার্সেলোনার রিপ্লে দেখছি। সে দিনের মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তা-ফাব্রেগাস যেন এ দিনের রবেন-রিবেরি-মুলার-গোমেজ। অ্যাশলে কোল আবার সেই সূর্যের তেজ দেখালেন ফুটবলে। দ্রোগবা এ দিনও রক্ষণে এসে বল ক্লিয়ার করেই আবার তিনটে টাচে অ্যাটাকিং থার্ডে। |
যুযুধান: বল দখলের লড়াইয়ে দ্রোগবা ও লাম। ছবি: এএফপি |
বায়ার্নের কোচ জাপ হেন্সকেন্সের ভাবনার মধ্যে ববি রবসনের বৈচিত্র্য দেখেন অনেকে। ‘জার্মানির ববি রবসন’ও চেলসির জমাট রক্ষণ ভাঙার ‘প্ল্যান বি’ দেখাতে পারলেন না। সবচেয়ে ভয় ছিল দ্রোগবাকে। এমনিতেই তাঁর রক্ষণ খুব খারাপ। তার পরে কার্ডের জন্য তিন ডিফেন্ডার নেই। দ্রোগবাকে সামলাতে জার্মান কোচ তাঁর ইউক্রেনিয়ান মিডফিল্ডার তিমোসচুককে এনে দিয়েছিলেন স্টপারে। দ্রোগবা ছোবলটা দিলেন ৮৮ মিনিটে ১-১ করার সময়।
ফুটবলে জার্মানদের সঙ্গে দেখা হলেই ইংরেজদের প্রিয় গান রয়েছে যুদ্ধ বিমান নিয়ে। দশটা জার্মান বিমানকে কী ভাবে ধীরে ধীরে ইংরেজ সেনারা শেষ করে দেন, সেই কথা গানে গানে বলেন তাঁরা। চেলসি সমর্থকদের অনেকে এই গান নিয়ে হাজিক ছিলেন মিউনিখে। অতিরিক্ত সময়ের আগে বোঝা যায়নি, ঠিক কী অস্ত্রে ইংরেজ ক্লাবটি নামাতে চায় জার্মানির যুদ্ধ বিমান। শুধু প্রতিআক্রমণে, কম বল পজেশনে সব সময় জেতা যায়? চেলসি দেখাল, জেতা যায়। ইউরোপ সেরাও হওয়া যায়।
চেলসি: চেক, বসিঙ্গা, কাহিল, লুইজ, কোল, মিকেল, ল্যাম্পার্ড, কালু, মাতা, বার্টান্ড, দ্রোগবা।
বায়ার্ন: নুয়ের, ল্যাম্পার্ড, বোয়াতেং, তিমোসচুক, কন্টেতো, সোয়াইনস্টাইগার, ক্রুস, রবেন, রিবেরি, মুলার, গোমেজ। |