শাহরুখ খানের সঙ্গে মর্যাদার লড়াই আর জেতা হল না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বিষণ্ণ সৌরভ বরং শনিবার রাতে পুণের মাঠে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার করলেন, কিং খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স পুণে দখল করে নিল। পুণের মাঠে কোয়ালিফায়ার্স হবে। মাঠও হয়তো ভর্তি হবে। কিন্তু সৌরভ থাকবেন না। সেখানে খেলবে শাহরুখের কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই ম্যাচ হেরে গেলেও ফাইনালে যাওয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পাবে তারা। সেক্ষেত্রে তৃতীয় কোয়ালিফায়ার্সে চেন্নাইতে তারা খেলবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার্সের জয়ী টিমের সঙ্গে। আর বিপর্যস্ত আইপিএল অভিযান শেষ করে সৌরভ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রবিবার সকালেই।
পুণে ওয়ারিয়র্সকে ৩৪ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় টিম হিসেবে শেষ চারে চলে গেল কেকেআর। ১৬ ম্যাচ থেকে তারা শেষ করল ২১ পয়েন্ট নিয়ে। সহবাগরা শেষ করেছেন ২২ পয়েন্ট নিয়ে। তা-ও গম্ভীরদের একটা ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। যে ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল ডেকান চার্জার্স। না হলে হয়তো আজ প্রথম দল হিসেবেও তাঁরা শেষ করতে পারতেন। আইপিএলের পাঁচ বছরের ইতিহাসে এত চমকপ্রদ ফল আর কখনও কেকেআর করতে পারেনি। আর কখনও তাদের এত শাসন করতে দেখা যায়নি। ওয়াংখেড়ের নিরাপত্তাকর্মী আর মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা সম্মান ছিনিয়ে নিয়েছিল। গম্ভীর আর তাঁর দল মুম্বই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার সড়ক দূরত্বে পুণের মাঠে সেরা সম্মান তাঁর হাতে তুলে দিল। পাঁচ বছরে যা কখনও পাননি শাহরুখ। ‘ডন’-এর মতো রিভলভার ঘোরাতে ঘোরাতে আইপিএলের শেষ চারে চলে যাওয়া। |
ওয়াংখেড়ে-বিতর্কের পরে মাঠে নাইট মালিক শাহরুখ। সঙ্গী অক্ষয়। শনিবার পুণেতে। |
ওয়াংখেড়েতে মাঠে ঢোকা নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, এখানে তাই ম্যাচ শেষ হওয়ামাত্র মাঠ চক্কর দিতে বেরিয়ে পড়লেন শাহরুখ। দর্শকদের দিকে হাত নেড়ে নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করলেন। ইডেনের ম্যাচটার মতো পুণের মাঠে দাদাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোননি। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সৌরভকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। দু’জনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথাও বললেন।
ও দিকে, সৌরভদের হারিয়ে গৌতম গম্ভীর যখন রাতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফিরছেন, তখন দেখা গেল পুণের ক্রিকেটভক্তরা দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্তও তাঁদের হাতে পুণে ওয়ারিয়র্সের পতাকা ছিল। মুখে ছিল সৌরভের নামে জয়ধ্বনি। তাঁরাই গম্ভীরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন সমর্থনের হাত। বলতে থাকলেন, “অল দ্য বেস্ট ফর ফাইনাল গোতি।” বোঝাই যাচ্ছে, মঙ্গলবার সহবাগের দিল্লির বিরুদ্ধে পুণে কাকে সমর্থন করবে।
গম্ভীর পুণের ভালবাসার মধ্যেও কলকাতার কথা ভুললেন না। “কলকাতার মানুষ যে ভাবে আমাদের সমর্থন করে গিয়েছে, অসাধারণ। প্রত্যেকটা ম্যাচে ইডেন ভর্তি থেকেছে। কলকাতার মানুষের ভাল কিছু প্রাপ্য আর সেটা আমাদের টিম দেবে।” খুব অর্থপূর্ণ ভাবে বললেন, “আমার মনে হয় কলকাতার একটাই টিম আছে। সেটা কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রথম তিন বছরে কলকাতার মানুষ অনেক দুঃখ পেয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের এই নতুন টিম সেই দুঃখ মেটানোর কথা ভেবেছে।” |
গম্ভীরকে ফিরিয়ে ওয়ারিয়র্সের উল্লাস। |
সৌরভের তেমনই এত খারাপ আইপিএল আর কখনও যায়নি। ও দিকে গম্ভীর কলকাতার হয়ে ম্যাচ জেতাচ্ছেন। এ দিকে সৌরভ পুণের হয়ে একের পর এক হারছেন। ব্যাটও আগের মতো চলছে না। ইডেনের ম্যাচটায় তা-ও লড়েছিলেন। এ দিন সেটাও হল না। ৮ বলে ৫ রান করে এলবিডব্লিউ হলেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে যদিও হতাশ দেখাল তাঁকে। শুধু আইপিএল কেন, পরপর এত হারের অন্ধকারে পড়ে এ ভাবে কখনও হাসফাঁস করেননি অধিনায়ক সৌরভ। ন’টা টানা হারের মধ্যে একটাতে শুধু সৌরভ অধিনায়কত্ব করেননি। সেই ম্যাচ ডাগ-আউটে বসেছিলেন তিনি। ১৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শেষ করলেন তাঁরা। কেকেআর উপরের দিক থেকে দ্বিতীয় টিম। পুণে এখন নীচের দিক থেকে দ্বিতীয়। শেষ ম্যাচে ডেকান জিতে গেলে সেটাও থাকবে না। ৯ টিমের মধ্যে নবম হিসেবে শেষ করতে হবে। কেকেআর যতটা উজ্জ্বল, পুণে যেন ততটাই ম্রিয়মান। ১৩৬-এর মতো সাধারণ স্কোরও তাড়া করতে পারল না। সর্বোচ্চ স্কোর রাইডারের ২৪ বলে ২২। ও দিকে, সাকিব আল হাসান বসে থাকতে থাকতে আজ খেলে দিয়ে গেলেন। ৩০ বলে ৪২ আর বল হাতে দু’উইকেট। ম্যাচের সেরা নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবার অবকাশ ছিল না। লক্ষ্মীরতন শুক্ল টিমে সুযোগ পাচ্ছেন না। পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে নেমে কার্বন কামাল ক্যাচের পুরস্কার নিয়ে গেলেন।
পুণের মাঠে সব মিলিয়ে কামাল কেকেআর!
|
জিতেও ব্রেট লি-কে নিয়ে অস্বস্তি
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুণে |
দু’নম্বর দল হিসাবে প্লে অফে উঠেও ব্রেট লি-কে নিয়ে চাপা অস্বস্তিতে কেকেআর শিবির। এ দিন পুণের বিরুদ্ধে বাদ পড়ে এতটাই মুষড়ে পড়েন এই অস্ট্রেলীয় পেসার, যে তিনি মাঠেই আসেননি। এ নিয়ে কেকেআর শিবিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছেন, বাদ তো অনেকেই পড়ে কিন্তু তা বলে মাঠে কেন আসবেন না লি? সব মিলিয়ে আনন্দের মাঝেও একটা খচখচানি থেকেই যাচ্ছে শাহরুখের সংসারে। |