অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা ধরলে ১৯ মে, ২০১২-তেই সম্ভবত তা অতীত হয়ে গেল। দারুণ নাটকীয় কিছু মোড় তৈরি না হলে অধিনায়ক সৌরভ মনে হয় না আর ফিরবেন বলে। এটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে কারণ সৌরভ নিজেই আর ফিরতে চান না নেতা হিসেবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে অধিনায়কত্ব আর সৌরভএত কালের বন্ধন কেটে গিয়ে এ বার বিকর্ষণ হতে শুরু করেছে। আশ্চর্য শোনালেও সত্যি!
ক্রিকেটার সৌরভের কথা ধরলে কিন্তু ১৯ মে, ২০১২-ই তাঁর বিদায়ী ম্যাচ হয়ে থাকল, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বরং সৌরভের হাতে ছেড়ে দিলে তিনি আবার আইপিএলে ক্রিকেটার হিসেবে ফিরতে চান। পুণে ফ্র্যাঞ্চাইজির যা মনোভাব তাতে পরের বার তাঁরা ক্রিকেটার সৌরভকে নকশায় রাখছেন বলে কোনও খবর নেই। বরং সহারা-প্রধান সুব্রত রায় টিভি সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন, সামনের বার সৌরভ মেন্টরের দায়িত্ব পালন করবেন। অদূর ভবিষ্যতে সেই মনোভাবের খুব পরিবর্তন হবে এমন আভাস নেই।
আইপিএলের চতুর্থ কোয়ালিফায়ার কে হবে তার চেয়েও তাই বড় ধাঁধা তৈরি হতে যাচ্ছে এটা। ফ্র্যাঞ্চাইজি চাইছেন, সৌরভ ক্রিকেটারের বেশ ছেড়ে মেন্টরের দায়িত্ব নিন। পুণে কর্তারা চান, যুবরাজ সিংহ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারলে হয় তাঁর হাতে নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিতে। নয়তো তাঁদের পছন্দ স্টিভ স্মিথ। যিনি অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্স-কে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে কি নতুন অধিনায়কের পুণে টিমে আগামী বছরে জায়গা হবে সৌরভের? |
সৌরভ খুল্লমখুল্লা বলে দিয়েছেন, প্লেয়ার হিসেবে তাঁর সঙ্গে পুণের চুক্তি তিন বছরের । তৃতীয় বছর শেষ হচ্ছে ২০১৩-তে। অনেকের মনে হচ্ছে, ঠারেঠোরে তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, আমাকে প্লেয়ার হিসেবে সরিয়ে দিতে হলে চুক্তি লঙ্ঘন করে সরাতে হবে। মেন্টর হওয়া নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, মেন্টর তো এ বারেও ছিলাম। তার সঙ্গে খেলা-না খেলার কী সম্পর্ক?
কী হবে যদি সৌরভ এবং পুণে ফ্র্যাঞ্চাইজি দু’পক্ষই তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন? আর এক দফা বিতর্কের ঝড় উঠতে যাচ্ছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিই চাইবেন না সৌরভের মতো মহাতারকাকে ডাগ-আউটে বসিয়ে রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক। তাতে আরও বড় বিতর্ক লেগে থাকার আতঙ্ক। একমাত্র সমাধানসূত্র বেরোতে পারে যদি চলতি আইপিএল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুব্রত রায় এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দু’জনে শীর্ষ বৈঠকে বসে কোনও রফা হল।
অনেকেই মনে করছেন, পঞ্চম আইপিএলে বিপর্যয়ের দায় একা সৌরভের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় হবে। বরং সবথেকে তুঘলকি সিদ্ধান্ত হয়েছে, নিলাম বয়কট করা। যখন বেঙ্গালুরুর নিলাম-ঘরে বসে কেকেআর সুনীল নারিনকে কিনছে, যখন দিল্লি মাহেলা জয়বর্ধনেকে তুলে নিচ্ছে, যখন চেন্নাই সুপার কিংস রবীন্দ্র জাডেজার জন্য রেকর্ড অর্থের ‘বিড’ করছে, তখন সৌরভরা নিলামে যোগ না দিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার বিমান ধরছেন। সৌরভ এর পরেও চেষ্টা করেছিলেন মোটামুটি একটা টিম দাঁড় করানোর। মাইকেল ক্লার্ককে খেলতে রাজি করিয়েছেন। স্টিভ স্মিথকে সই করিয়েছেন। |
ঘটনা হচ্ছে, যাঁরা এ বারের বিপর্যয়ের মধ্যেও সৌরভের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না সামনের বার ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ফিরবেন কী ভাবে? একে ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরূপ হয়ে পড়া মনোভাব। তার উপর সামনের বছর তিনি হয়ে যাবেন একচল্লিশ ছুঁইছুঁই। আইপিএলে পিঠোপিঠি ম্যাচ, রাতের ম্যাচ খেলে পরের সকালেই আবার ফ্লাইট ধরা, পৌঁছেই হয় প্র্যাক্টিস বা ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ো এর কী ধকল এ বারেই তিনি টের পেয়েছেন। সামনের বার, আরও এক বছর বেড়ে যাওয়া বয়সে সে সবের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো ফিটনেস থাকবে তাঁর? বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রাক্তন ক্রিকেটার সবাই বলছেন, এই আইপিএলেই তাঁর থামা উচিত। এর পর ক্রিকেটজীবনকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চাইলে আরও অসম্মানিত হওয়ার ঝক্কি থাকবে।
সৌরভ কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটারের মন্তব্য পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। সচিন তেন্ডুলকর যেমন মনে করেন, তিনি ওয়ান ডে ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন, না ছেড়ে দেবেন সেটা তিনি ঠিক করবেন, আইপিএল থেকে বিদায়ের ব্যাপারে সৌরভের স্টান্সও মনে হচ্ছে একই। আর তিনি মনে করেন, টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য নিজেকে ফিট রাখাটা খুব সাংঘাতিক কোনও ব্যাপার নয়। বরং অনেক বেশি ধকলের হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সি। ওটাই নিংড়ে নিয়ে যায়। চল্লিশটা প্লেয়ার। পুরো যেন বিয়েবাড়ির ভিড় লেগে আছে সারাক্ষণ। একে খেলাও তো ও মনঃক্ষুণ্ণ। ওকে খেলাও তো এর গোঁসা হয়ে যাচ্ছে। এ বারও তিনি পুণের ক্যাপ্টেন্সি করতে চাননি। ফ্র্যাঞ্চাইজির চাপাচাপিতে দায়িত্ব নিতে রাজি হন। নেতৃত্বের দায়িত্ব ঘাড়ের ওপর না থাকলে ধকল অনেক কমে যাবে বলে তাঁর মত। আরও কয়েকটা পর্যবেক্ষণ রয়েছে তাঁর নোটবুকে। যেমন এ বারে সবচেয়ে বড় ভুল, আরও বেশি ম্যাচ খেলে নিজেকে আরও ভাল তৈরি করে না নামা। সামনের বার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি চেষ্টা করবেন বোর্ডের থেকে অনুমতি নিয়ে বিদেশে ভাল টুর্নামেন্টে খেলতে।
তাই ১৯ মে, ২০১২-তে বসে লিখতে হলে এটাই লিখতে হয় যে, বাংলার জার্সি গায়ে ফের সামনের মরসুমে উদয় হচ্ছেন সৌরভ। তবে সিএবি কর্তারা অনুরোধ করলেও হয়তো অধিনায়কত্বের দায়িত্ব আর নেবেন না। ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি’ শনিবার রাতে পুণের মাঠে নিঃশেষ হয়ে গেলেন! |
আইপিএলে সৌরভ |
অধিনায়ক |
সাল |
ম্যাচ |
জয় |
হার |
পরিত্যক্ত |
স্থান |
২০০৮ |
১৪ |
৬ |
৭ |
১ |
৬ নম্বর। |
২০১০ |
১৪ |
৭ |
৭ |
০ |
৬ নম্বর। |
২০১২ |
১৫ |
৪ |
১১ |
০ |
টিম ৮ নম্বর। |
|
ক্রিকেটার |
সাল |
ম্যাচ |
রান |
সর্বোচ্চ |
গড় |
স্ট্রাইক রেট |
উইকেট |
২০০৮ |
১৩ |
৩৪৯ |
৯১ |
২৯.০৮ |
১১৩.৬৮ |
৬ |
২০০৯ |
১৩ |
১৮৯ |
৪৬ |
১৭.১৮ |
৯১.৩ |
২ |
২০১০ |
১৪ |
৪৯৩ |
৮৮ |
৩৭.৯২ |
১১৭.৬৬ |
০ |
২০১১ |
৪ |
৫০ |
৩২ |
২৫ |
৮৪.৭৪ |
বল করেননি। |
২০১২ |
১৫ |
২৬৮ |
৪৫ |
১৭.৮৬ |
৯৮.৮৯ |
২ |
|
|