যতটা লাগবে বলে মনে করা হয়েছিল, আখেরে প্রয়োজন হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ গলদ ছিল গোড়ায়। চাহিদার আগাম হিসাবে। আর সেই কারণেই হালফিলে চটের বস্তার এই আকাল।
সম্প্রতি চটের বস্তার সমস্যা নিয়ে এই মত গৃহীত হয়েছে কলকাতায় জাতীয় পাট পর্ষদ আয়োজিত কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠকেই। অর্থাৎ, কারখানায় উৎপাদন সমস্যার ফলে জোগানে ঘাটতি নয়। চটের বস্তার চাহিদা আগাম আঁচ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই যে এই সঙ্কটের মূল কারণ, কার্যত তা মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। তাঁদের দাবি, কয়েকটি রাজ্যে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য বস্তার বাড়তি চাহিদার কারণেই ওই অনুমান মেলেনি।
সম্প্রতি শহরে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও জুট কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই), রেল, কন্টেনার কর্পোরেশন, চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ ইত্যাদির প্রতিনিধিরা। বৈঠকে বস্তা ঠিক সময়ে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ফের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জানানো হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে অবিলম্বে প্রয়োজন ২.২৫ লক্ষ গাঁটরি (বেল) বস্তা। যা অবশ্য চলতি মাসেই সরবরাহ করা যাবে বলে পাট শিল্পের দাবি।
কিন্তু বড় কোনও শ্রমিক-বিক্ষোভ না-হওয়ায় কয়েক বছরে রাজ্যের ৫৪টি চটকলে (দেশে সিংহভাগ বস্তা তৈরি হয় এখানে) সে ভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। তা হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হল কেন?
১৯৮৭ সালের জুট প্যাকেজিং মেটিরিয়ালস্ (কম্পালসরি ইউজ ইন প্যাকিং কমোডিটিজ) আইন অনুযায়ী, খাদ্যশস্য ও চিনি শুধু চটের বস্তাতেই বন্দি করতে পারে ১০টি রাজ্য ও এফসিআই। ওই বস্তা কেনার জন্য প্রথমে খাদ্যশস্য (মূলত চাল, গম) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। তার পর সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের কাছে বস্তার চাহিদার পরিমাণ জানায় বিভিন্ন রাজ্য ও ফুড কর্পোরেশন। সেখান থেকে বস্তার বরাত পাঠানো হয় ডিরেক্টর জেনারেল অফ সাপ্লাই অ্যান্ড ডিসপোজাল (ডিজিএসডি)-এর দফতরে। সাধারণত এই চাহিদা পাঠানো হয় খরিফ শস্যের জন্য মে মাসে আর রবি শস্যের জন্য নভেম্বরে। গত নভেম্বরে পাঠানো বরাত মাফিক চলতি বছরের গোড়াতেই ৮.৯৪ লক্ষ গাঁটরি বস্তা কিনে এফসিআই ও রাজ্যগুলির কাছে তা পাঠিয়ে দেয় ডিজিএসডি। কিন্তু পরে দেখা যায় যে, ওই প্রাথমিক অনুমানের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে অনেকখানি। চাহিদা তৈরির পুরোভাগে ছিল মধ্যপ্রদেশ। কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্র নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্যের উপর আরও ১০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে শস্য কেনে মধ্যপ্রদেশ সরকার। যে কারণে তাদের ভাঁড়ারে আসে বাড়তি কয়েক লক্ষ টন খাদ্যশস্য। আর সেই মতো মার্চে বাড়তি বস্তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে দাবি জানায় তারা। তখন থেকেই বস্তায় টান পড়তে থাকে বলে খাদ্য মন্ত্রকের আধিকারিকের দাবি।
সম্প্রতি বস্তার আকাল নিয়ে লোকসভায় হইচই বাধায় বিজেপি। রাস্তা খুঁজতে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে ঠিক হয়, এ মাসের মধ্যেই বাড়তি ২.২৫ লক্ষ গাঁটরি বস্তা জোগানো হবে ডিজি এসডি-কে। এ নিয়ে সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন আইজেএমএ চেয়ারম্যান মণীশ পোদ্দার। |