ঝর্না-কলমের যুগ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। কালির দৌলতে বাঙালির ঘরে ঘরে পরিচিত সুলেখা-ও হারিয়ে যেতে বসেছিল। দেড় যুগ কারখানা বন্ধ থাকার পর উৎপাদন শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু লোকসান এড়ানো যাচ্ছিল না। গত আর্থিক বছরে সামান্য লাভের মুখ দেখে সংস্থা। ২০১১-’১২-য় পুঞ্জীভূত লোকসান ছাপিয়ে গিয়েছে লাভের মাত্রা। তবে, এ বার শুধু কালি নয়, ‘সুলেখা’ ব্র্যান্ড-নামকে মূলধন করে সৌরলন্ঠন এবং গৃহস্থালির পণ্য এনেছে সংস্থা। কর্তৃপক্ষের আশা, এ বার তাঁরা এগোনোর গতি পাবেন।
স্বদেশি কালি দিয়ে সুলেখার যাত্রা শুরু ১৯৩৪-এ। সুন্দর লেখা থেকে সুলেখা নামকরণ করেছিলেন গাঁধীজি। স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীগোপাল মৈত্র প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকাকালীন পদার্থবিদ্যায় এমএসসি করেন। কারামুক্তির পর পড়াতেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। বিদেশি কালির একচেটিয়া বাজার খর্ব করতে ভাই শঙ্করাচার্য মৈত্রের সঙ্গে তৈরি করেন স্বদেশি কালি। সকাল-সন্ধ্যায় ব্যাগে করে ‘প্রফেসার মৈত্রের কালি’ হাঁক দিয়ে তা ফিরি করতেন। ধীরে ধীরে একচেটিয়া ব্যবসা দখল করে সুলেখা।
ছয়ের দশকে উৎপাদন শুরু হয় যাদবপুর কারখানায়। পরে ফাউন্টেন পেনের কদর কমলে আশির দশকের শেষে সঙ্কটে পড়ে সুলেখা। সংস্থার যুগ্ম ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৌশিক মিত্র জানান, “১৯৮৮ থেকে ২০০৬ কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন ফের শুরু হয় ২০০৬-এর শেষে।” কলমের কালির যুগ শেষ হয়নি বলে দাবি কৌশিকবাবুর। বলেন, “হাইকোর্ট পাড়ায় গেলেই দেখতে পাবেন কথাটা সত্যি কি না।” তবে, গত ক’বছরে কালির সঙ্গে বল পেন, পেন্সিল, ইরেজার, সাবান, ফিনাইল, ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। নতুন সৌর-লন্ঠন প্রসঙ্গে বলেন, “জানুয়ারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে যে এক হাজার সৌর-লন্ঠন বণ্টন করেন, সেগুলি আমাদের থেকেই কিনেছেন,” জানালেন কৌশিকবাবু।
নতুন পণ্যের হাত ধরে উত্তর-পূর্ব ভারত ও বিহার-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডে ব্যবসা বাড়াচ্ছে সুলেখা। ২০১১- ’১২-য় আগের বছরের তুলনায় ব্যবসা বেড়েছে ৪০%। |