|
|
|
|
জলসঙ্কট |
পুকুরের জল খেলেন বিধায়ক |
বাপি মজুমদার • চাঁচল |
জলাভাবের খবর পেয়ে এলাকায় যাওয়া বিধায়ক তেষ্টা মেটাতে জল চেয়েছিলেন। পুকুরের জল এনে দিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের মসানন্দপুরের বাসিন্দারা।
“পুকুরের জল কি খাওয়া যায়”, বিধায়কের এই প্রশ্ন শুনে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর জবাব, “নলকূপে জল উঠছে না। প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা করছে না। আমরা পুকুরের জল খেতে পারলে, আপনি কেন পারবেন না!” ক্ষোভের পারদ ঊর্ধ্বমুখী বুঝে পুকুরের জলই গলায় ঢালেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমুল হোসেন।
ঘটনাটা চাঁচল মহকুমার। বৃহস্পতিবার বিকেলের। শুক্রবার দুপুরে ওই মহকুমারই অন্যত্র জলাভাবের আর এক চেহারা দেখলেন আর এক বিধায়ক। মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সী যাচ্ছিলেন চাঁচল ২ ব্লকে দলীয় কাজে। পথে ওই ব্লকের কাণ্ডারণে কলসি মাথায় জল নিয়ে ফেরা মহিলাদের দেখে জল-সমস্যার কথা জানতে গাড়ি থেকে নামেন বিধায়ক। তখনই শুরু হয় বিক্ষোভ। ওই মহিলাদের ক্ষোভ, “এলাকায় সরকারি নলকূপ অকেজো। শুকিয়েছে কুয়ো, খাল, পুকুর। জল আনতে ছুটতে হচ্ছে অন্তত দু’কিলোমিটার। কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। ভোটে জিতে নেতারা কি শুধু গাড়ি চেপে ঘুরবেন!” |
|
চাঁচল-২ ব্লকের মালতিপুরে আরএসপি বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সিকে ঘিরে বিক্ষোভ। - নিজস্ব চিত্র |
শুধু ওই দু’টি এলাকা নয়জলকষ্টে জেরবার চাঁচল মহকুমার অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের ভিঙ্গোল পঞ্চায়েত এলাকা যেমন। পঞ্চায়েতের ২০টি গ্রামে রয়েছে ৩৮০টি সরকারি নলকূপ। পঞ্চায়েত প্রধান বিমানবিহারী বসাক জানাচ্ছেন, যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই অকেজো। অর্থাভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না। ফলে, এলাকাবাসীদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্যালো-পাম্প আর পুকুরের জল।
প্রায় একই ছবি মসানন্দপুর গ্রামেও। সেখানে হাজার দু’য়েক লোকের বাস। ২৪টি সরকারি নলকূপের একটিতেও জল উঠছে না মাসখানেক। এলাকার একাধিক পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, “বিশেষ পদ্ধতিতে ২০ ফুট গভীরে পাইপ নামিয়ে নলকূপ পিছু ৩ হাজার টাকা খরচ করলে জল উঠছে। কিন্তু টাকা কোথায়! প্রশাসনের কর্তাদের সমস্যা জানিয়েছি।”
বিধায়ক তজমুল হোসেনের ‘উপলব্ধি’, “ভয়াবহ পরিস্থিতি! এলাকায় ঘোরার সময় একটি গ্রামে জল চাইতে বাসিন্দারা পুকুরের জল দিলেন। ওঁরাও তাই খাচ্ছেন। আমিও খেলাম। এ ভাবে চললে ওখানে ভয়ঙ্কর ভাবে পেটের রোগ ছড়াবে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” আর মালতিপুরের বিধায়ক বলেন, “কাণ্ডারণ এলাকার মহিলাদের দাবি ছিল, ওই এলাকার নলকূপ সারানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ওঁদের সমস্যা প্রশাসনকে আগে জানিয়েছি। এ দিনও বললাম।”
চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “যে ভাবে জলস্তর নেমেছে, তাতে গোটা মহকুমা জুড়ে একটা সামগ্রিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জেলা সদরে। তত দিন পঞ্চায়েতগুলোকে বিভিন্ন তহবিল থেকে যতটা সম্ভব নলকূপ সংস্কারের কাজ করতে বলা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|