|
|
|
|
|
|
ফাংগাসের সর্বনাশ: উপায় মজুত
গরমকালে বেশি ঘামলে ত্বকের সমস্যা বাড়ে। লালচে ভাব, চুলকানি, ছাল
ওঠা এ
সবই কিন্তু
ছত্রাক সংক্রমণের উপসর্গ। প্রতিষেধক, চিকিৎসা
দুইই প্রয়োজন। জানালেন ডা. সুব্রত মালাকার |
|
আমরা লোকের মুখে প্রায়ই শুনি ফাংগাল ইনফেকশন কথাটা। ‘কী হয়েছে তোমার?’, ‘ডাক্তার বলেছেন ফাংগাল ইনফেকশন হয়েছে।’ আমরা কেউ বুঝি, কেউ আবার না বুঝেই ঘাড় নেড়ে দিই। কারণ এই কথাটি খুবই চলতি।
ফাংগাল ইনফেকশন কী
এটি এক ধরনের সংক্রমণ। ফাংগাস প্রধানত প্রোটিন খেয়ে বাঁচে। তাই শরীরের যে সব জায়গায় প্রোটিন থাকে, সেখানেই এই অসুখটি দেখা যায়। যেমন ত্বকের উপরিভাগ চুলে ও নখে। যে সব জায়গায় ঘাম বেশি হয় সেই সকল জায়গায় এই সংক্রমণের প্রভাব দেখা যায়। এই অসুখটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশের অসুখ।
শরীরের কোন কোন জায়গায় হাতে, পায়ে, মুখে, শরীরের অন্য নানা জায়গায় এই ফাংগাল ইনফেকশনটি দেখা যায়। বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন খাঁজে অর্থাৎ চাপা ও ঢাকা জায়গায় এই ইনফেকশনের প্রকোপ বেশি। যেমন স্তনের নীচে, বাহুমূলে, ঊরু ও জঙ্ঘার সন্ধিস্থল প্রভৃতিতে।
পায়ে যে ফাংগাল ইনফেকশন হয় তাকে অ্যাথলিট ফুট বলা হয়। এই অংশটি খুবই চুলকায় এবং আঁশের মতো ওঠে, ফাটা ফাটা হয়ে যায়। এটি সাধারণত পায়ের আঙুলের ফাঁকে দেখা যায়। যাঁরা বেশি খালি পায়ে ভিজে জায়গায় চলাফেরা করেন, জলে কাদায় হাঁটেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক সময় সাঁতারের জায়গা থেকে আসতে পারে।
নখের যে কোনও অংশে হতে পারে। ত্বকের তুলনায় নখে ফাংগাল ইনফেকশন কিছু বেশি দেখা যায়। কারণ, নখটা শরীরের শক্ত জায়গা। সংক্রমণ হলে নখের রং পালটে যায়। নখটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। নখের চার দিকের ত্বক মোটা হয়ে যায়।
মাথায়ও এই সংক্রমণ হতে পারে। সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই সেটা বেশি দেখা যায়। এটি অনেকটা জায়গা জুড়েই হয়। লাল হবে, চুলকোবে এবং পুঁজ ভর্তি একটা উঁচু ঢিপির মতো হয়ে উঠবে। এই জায়গাটি থেকে চুল উঠে যেতে পারে। তবে ইনফেকশন কমে গেলে আবার নতুন চুল গজাবে। বাচ্চাদের মুখে ফাংগাল ইনফেকশন হলে, সেটা খুবই কষ্টকর, এর ফলে অনেক সময় বাচ্চারা খাওয়া সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়। ন্যাপির জায়গাগুলিতেও এই সংক্রমণের প্রকোপ দেখা যায়। |
|
মুখের ভিতরে এক ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন হয়, একে বলা হয় থ্রাশ। মেয়েদের গর্ভাবস্থায় যোনির মধ্যে ফাংগাল ইনফেকশন খুব বেশি হয়। এটিকে দেখতে হয় একটা সাদা প্যাচ-এর মতো। ঘষে তুলে দিলে লাল একটি অংশ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ফাংগাল ইনফেকশন একই সঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় হতে পারে।
ইনফেকশন হলে কী হয়
• শরীরে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায় বা অসুবিধা হয়, সেটা নির্ভর করে ফাংগাসটি কী ধরনের এবং শরীরের কোন জায়গায় হয়েছে, তার ওপর।
• শরীরে বিভিন্ন ধরনের র্যাশ দেখা যায়। প্রথমে লাল লাল হয়, খুব চুলকায় এবং অল্প খোসা খোসা মতো ওঠে। ত্বকটি শুষ্ক হয়ে যায়।
• ‘ছুলি’ একটি বিশেষ ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন। এটি হয় প্রধানত হাতের ওপরের অংশে, পিঠে, গলায় এবং বুকে। ওই অংশের ত্বকটি দেখতে সাদা, গোলাপি, অথবা হালকা কালো লাগতে পারে। যেখানে বেশি হয়, সেখানে ছাল উঠে যেতে পারে। যাঁদের খুব বেশি ঘামের প্রবণতা থাকে, তাঁদের ছুলি বেশি হয়। শীতকালে ছুলি নিজে থেকেই কমে যায়। |
|
কারণ
• জামাকাপড়, চিরুনি, সুইমিং পুল থেকে প্রধানত এই রোগটি ছড়ায়। ঘরে পোষা জীবজন্তু এই রোগের একটা উৎস।
• এক জনের টুপি অন্য জন ব্যবহার করলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
• বহু দিন থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হতে পারে।
• ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে সংক্রমণ হতে পারে।
• যদি প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, যেমন যাঁর এড্স আছে, তাঁর ফাংগাল ইনফেকশন-এর আশঙ্কা প্রবল।
• অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এর অন্যতম একটি কারণ।
• কারও হয়েছে, এ রকম ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলে বা সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ হবে।
• যাঁরা জলের কাজ বেশি করেন, এবং কাজ হওয়ার পর যদি শুকনো করে হাত-পা না মোছেন, তাঁদের সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন।
কী করে বোঝা যাবে ফাংগাল ইনফেকশন হয়েছে?
• চোখে দেখেই সম্পূর্ণ বোঝা যায়।
• ত্বককে ঘষে ‘স্ক্রেপিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।
• নখ বা চুলের অংশ পরীক্ষা করে বোঝা যায়।
প্রতিরোধ করার কয়েকটি টিপস
কিছু পরামর্শ, ঠিক ঠিক মেনে চললে উপকার পাবেন।
• স্নান করার পর বা ঘর্মাক্ত অবস্থায় এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুকিয়ে নিন। প্রধানত শরীরেরর খাঁজগুলিকে শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।
• নিজের জামাকাপড়, বিছানার চাদর, সম্ভব হলে প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন। গ্রামেগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে, পা ভেজাতে ইচ্ছে করলে, কিছু ক্ষণ আনন্দ উপভোগ করেই পা শুকিয়ে নিন।
• ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। সুতির পোশাকে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায়, ফলে ফাংগাল ইনফেকশন বাসা বাঁধতে পারে না।
• ডায়াবিটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
চিকিৎসা
• লাগানোর ওষুধ দেওয়া হয়। এটি যেখানে হয়েছে সেখানে লাগাতে হয়।
• বিভিন্ন অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ পেন্ট, লোশন, শ্যাম্পু এবং পাউডার, নানা ভাবে পাওয়া যায়।
• যদি শরীরের অনেকখানি জায়গা জুড়ে হয়, এবং মাথায় ও নখেও দেখা যায়, তা হলে লাগানোর সঙ্গে খাওয়ার ওষুধও দিতে হবে।
• যাঁদের বেশি চুলকোয়, তাঁদের অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ খেতে হবে।
• ফাংগাল ইনফেকশন-এর চিকিৎসা খুবই ফলপ্রদ। তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন পেটের অসুখ। অসুখ সেরে যাওয়ার দুই-চার সপ্তাহ পর্যন্ত ওষুধ লাগাতে হবে। বন্ধ করলে অসুখটি আবার ফিরে আসবে।
|
যোগাযোগ: ২৩৫৮-৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|