ড্রাগ লাইসেন্স এবং বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি না থাকায় প্রেসক্রিপশনে এক সংস্থার ওষুধ লেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত।
শুক্রবার সুপার জানিয়েছেন, গত ১০ মে এক ব্যক্তি ওই সংস্থা সম্পর্কে তাঁর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, কয়েক জন হাউসস্টাফ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি চিকিৎসককে টাকা দিয়ে তাদের ওষুধ লিখিয়ে নিচ্ছে ওই সংস্থাটি। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অসিতবাবু।
সুপারের কাছে যিনি অভিযোগ জানান, সেই দেবাশিস মিত্র এক ওষুধ সংস্থার কর্মী। লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, ড্রাগ লাইসেন্স এবং হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও মেডিসিন ও শল্যচিকিৎসা বিভাগের অন্তত ১০ চিকিৎসককে ‘মাসোহারা’ দিয়ে ওষুধ লেখাচ্ছে একটি সংস্থা। অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের নাম ও প্রতি মাসে তাঁরা সংস্থার কাছ থেকে কত পাচ্ছেন, তার তালিকাও দিয়েছিলেন তিনি।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। এ দিন সকালে সুপার বলেন, “কোন সংস্থার ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে বা নেই, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখবে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর। কেউ নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের অনুরোধ করতেই পারেন। চিকিৎসকেরাও তা লিখতে পারেন। এর মধ্যে অন্যায় কোথায়?” চিকিৎসকদের ‘মাসোহারা’ নেওয়ার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে তিনি দাবি করেন, “ওই চিকিৎসকেরা যে মাসোহারা নিচ্ছেন, তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। আমার তো মনে হচ্ছে, যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজেই ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িত। না হলে কোন চিকিৎসক মাসে কত টাকা পাচ্ছেন, তা জানলেন কী করে? সম্ভবত তিনি নিজেই মাসে-মাসে ওই চিকিৎসকদের টাকা দিতেন। এখন কোনও কারণে স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ায় অভিযোগ করেছেন।”
কিন্তু বিকেলে কলকাতা থেকে রাজ্য কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তা সুপারকে ফোন করার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সুপার বলেন, “ওই সংগঠনের তরফে তরুণ দাস আমায় ফোনে জানান, ওই সংস্থাটিকে তাঁরা ওষুধ বিক্রির অনুমতি দেননি। তার পরেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাসপাতালের সমস্ত বিভাগের চিকিৎসকদের জানিয়েছি, ওই সংস্থার কোনও ওষুধ তাঁরা যেন প্রেসক্রিপশনে না লেখেন।”
অভিযুক্ত সংস্থার অন্যতম কর্তা সঞ্জয় মজুমদার অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব অনুমতি এবং নথিপত্র আছে। চুরির অপরাধে কিছু কর্মীকে আমরা সংস্থা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। তারাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে।” দেবাশিস মিত্রও তাঁদের সংস্থার কর্মী ছিলেন বলে তিনি জানান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দশ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওই সংস্থা থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। |