‘ভুল চিকিৎসায়’ এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলে হুলুস্থুল বাঁধল হুগলির মশাটের একটি নার্সিংহোমে। গ্রামবাসীরা নার্সিংহোমে বিক্ষোভ দেখান। মারধর করা হয় নার্সিংহোমের মালিক-সহ তিন জনকে। রিসেপশনের চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলা হয়। শেষ পর্যন্ত, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ জানায়, চণ্ডীতলার আঁইয়া পঞ্চায়েতের বাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আইজেল (৬২)-এর মৃত্যুকে ঘিরে ওই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে মশাট বাজারের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন আইজেল। শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ তাঁর অস্ত্রোপচার শুরু হয়। নার্সিংহোমের মালিক নিজেই চিকিৎসক। তিনিই অস্ত্রোপচার করেন। আইজেলের বাড়ির লোকজনের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছিলেন, এই অস্ত্রোপচারে তেমন কোনও ঝুঁকি নেই। মৃতের ভাই সাদেক আলির দাবি, অস্ত্রোপচার শুরু হওয়ার আধঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক এসে জানান, রোগী মারা গিয়েছেন। সেই শুনেই চেঁচামেচি জুড়ে দেন মৃতের বাড়ির লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময়ে ‘ভুল চিকিৎসায়’ আইজুল হকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর খবর চাউড় হতেই বিকেল ৫টা নাগাদ গ্রাম থেকে শ’খানেক লোক নার্সিংহোমে চলে আসেন। শুরু হয় বিক্ষোভ। নার্সিংহোমের একতলায় রিসেপশন। রোগীদের ওয়ার্ড এবং অপারেশন থিয়েটার দোতলায়।
অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা রিসেপশনের চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয়। তছনছ করা হয় কাগজপত্র। রিসেপশনিস্ট অজয় বিশ্বাসকে মারধর করা হয়। এর পরে তারা সটান দোতলায় উঠে যায়। যে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছিলেন, তাঁকে হাতের সামনে পেয়ে কিল, চড়, ঘুসি মারা হয়। এক আয়াকেও মারধর করা হয়। নার্সিংহোমে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে চণ্ডীতলা থানার ওসি দেবনাথ সাধুখাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। মারমুখী জনতার হাত থেকে আক্রান্তদের উদ্ধার করে পুলিশ। নার্সিংহোমের মালিক এবং ওই চিকিৎসককে গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। অস্ত্রোপচারের আগে এবং অস্ত্রোপচার চলাকালীন রোগীকে কী কী ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে এই দাবি তুলে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এর পরে, পুলিশের হস্তক্ষেপে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সাদেক আলি বলেন, “নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই আমাদের বলেছিলেন, এটা ছোটখাট অপারেশন। ভুল চিকিৎসা না হলে দাদা এ ভাবে মারা যেত না।” নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।
সন্ধ্যায় নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখা যায়, বাইরে তখনও বিক্ষোভ চলছে। নার্সিংহোমের ভিতরে প্রহৃত চিকিৎসক চোখ বন্ধ করে স্ট্রেচারে শুয়ে রয়েছেন। তিনি কোনও কথা বলেননি। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে অন্য কেউ-ও এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি।
সন্ধ্যায় এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। এখনও থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।” মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। |